বিশ্ব রাজনীতির উত্তপ্ত কেন্দ্রবিন্দু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শান্তিচুক্তি ও বাণিজ্য সম্ভাবনার একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মতে, যদি দুই দেশের মধ্যে শান্তির পথ তৈরি হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুলে যাবে বিশাল বাণিজ্য সম্ভাবনার দ্বার।
ট্রাম্প তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক পোস্টে বলেন, "আশা করছি এই সপ্তাহেই রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে। একবার তা হলেই, তারা উভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় ধরনের ব্যবসা শুরু করবে।"
এই মন্তব্য বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন তুলেছে। অনেকে বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি যুদ্ধাবসানের পরবর্তী কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানকে ইঙ্গিত করে। যেখানে যুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে শান্তির বার্তা
এদিকে ১৯ এপ্রিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে বৈঠকে ঘোষণা দেন যে, ইস্টার উৎসব উপলক্ষে একটি সাময়িক অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত মস্কো সময় অনুযায়ী অস্ত্রবিরতি কার্যকর থাকবে। একই সঙ্গে পুতিন ইউক্রেনকেও আহ্বান জানান এই অস্ত্রবিরতিতে অংশ নেওয়ার জন্য।
পুতিনের এই ঘোষণা অনুযায়ী ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাশিয়ার বাহিনীর জন্য অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতির এই পদক্ষেপ সাময়িক শান্তি আনলেও এটি কতটুকু দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
ইস্টার যুদ্ধবিরতির সময়সীমা শেষ
রবিবার (২১ এপ্রিল) রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো নির্দেশ দেননি। ফলে ইস্টার যুদ্ধবিরতি ২১ এপ্রিল রাতেই শেষ হয়ে গেছে। এখন পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠবে কিনা তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্য শুধুমাত্র ভবিষ্যৎ মার্কিন বাণিজ্যনীতির ইঙ্গিতই নয়, বরং তিনি আবারও আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রভাবশালী চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন। ২০২4 সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ট্রাম্প এমন সময় এই বার্তা দিলেন, যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচুক্তি যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন যেমন পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইবে, তেমনি রাশিয়ার ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে তারা বাণিজ্যে নতুন গতি আনতে পারবে। এই দুই ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য-কেন্দ্রিক শান্তির বার্তা এমন এক সময় এসেছে, যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের রক্তাক্ত পরিণতির অবসান চায় বিশ্ববাসী। যদি শান্তিচুক্তি বাস্তব হয়, তবে শুধু দুই দেশের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য তৈরি হতে পারে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। আর সেই সম্ভাবনার কেন্দ্রে থাকতে চাচ্ছেন ট্রাম্প নিজেই—শান্তির বিনিময়ে বাণিজ্যের জোরালো প্রতিশ্রুতি দিয়ে।