জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, আওয়ামী লীগের 'সংশোধিত' একটি পক্ষকে সামনে রেখে দলটির পুনর্বাসনের জন্য সেনানিবাস থেকে চাপ দেওয়া হয়েছে—এমন একটি দাবি তুলেছিলেন। তবে, সেনাসদর তার এই অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং দাবি করেছে, সেনাবাহিনীর সাথে তাদের বৈঠক সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ও ব্যক্তিগত আগ্রহে হয়েছিল।
হাসনাত আব্দুল্লাহর অভিযোগ: সেনানিবাস থেকে 'ভারতের পরিকল্পনা' নিয়ে চাপ
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাতে হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নতুন রূপে পুনর্বাসনের বিষয়ে সেনানিবাসের কাছ থেকে 'ভারতের পরিকল্পনা' উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন ও শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে "রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ" নামে একটি নতুন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা চলছে।
এই দাবির প্রেক্ষিতে তীব্র রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়। তার পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, সেনানিবাসে ১১ মার্চ এক বৈঠকে তাদের নতুন আওয়ামী লীগ মেনে নিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সেনাসদরের বিবৃতি: 'রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি'
সেনাসদরের পক্ষ থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহর অভিযোগকে 'রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি' এবং 'হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার' বলে অভিহিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই বৈঠকটি হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলমের আগ্রহে হয়েছিল এবং সেখানে তাদেরকে কোনো চাপ বা প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।
সেনাসদরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবত সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আগ্রহী ছিলেন এবং ১১ মার্চ তারা সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজারের মাধ্যমে সাক্ষাতের সময় চান। এরপর তারা সেনা সদরে এসে সরাসরি সেনা ভবনে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।"
এনসিপির নেতাদের প্রতিক্রিয়া: 'সংগঠন বা ব্যক্তিগত আগ্রহ?'
বৈঠকের বিষয়ে এনসিপির নেতারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও, নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকটি ছাত্রনেতাদের ব্যক্তিগত আগ্রহে আয়োজন করা হয়েছিল। তবে, এটি স্পষ্ট নয় যে, এই বৈঠক এনসিপির পক্ষ থেকে পূর্বানুমোদিত ছিল কিনা।
নতুন তথ্য: 'ফেসবুক পোস্টে বিভ্রান্তি'
হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্টের পর, জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে, হাসনাত আব্দুল্লাহ বৈঠকটি সেনাপ্রধানের সঙ্গে হয়েছিল কি না—এ প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেননি। তবে, সেনাসদরের বিবৃতিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, বৈঠকটি সেনাপ্রধানের সঙ্গে হয়েছিল এবং সেটি ছাত্রনেতাদের আগ্রহেই আয়োজন করা হয়েছিল।
অন্যদের বক্তব্য: 'শান্তি ও দূরত্ব বজায় রাখা'
বৈঠক নিয়ে দলের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠলেও, হাসনাত, সারজিস ও নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী বা সেনাপ্রধানের সাথে দূরত্ব বা রেষারেষি নেই বলে জানিয়েছেন। এর ফলে, এই রাজনৈতিক বিতর্কটি সামনের দিনে আরও জটিল হতে পারে।
সেনাসদরের এই প্রতিক্রিয়া এবং হাসনাত আব্দুল্লাহর অভিযোগের মধ্যে যে রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে, যা সামনের দিনে আরও বাড়তে পারে।



















