ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে এখন আর কেবল দাপ্তরিক কার্যক্রম চলে না, সেখানে চলছে গণআন্দোলনও। টানা কর্মসূচি ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ভবন এলাকা। ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব না দেওয়ার প্রতিবাদে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আজও নগর ভবনের ফটকে জড়ো হয়েছেন তার শত শত অনুসারী। শুধু জড়ো হওয়াই নয়, তারা ভবনের মূল ফটকসহ সমস্ত অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন। ফলে নাগরিক সেবার কার্যক্রম আবারও পুরোপুরি বন্ধ।
সকাল থেকেই নগর ভবনের ভেতরের ফটকে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাদের নেতৃত্বে রয়েছে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ ও ‘ঢাকাবাসীর ব্যানার’-এ সংগঠিত ইশরাক সমর্থকরা। আন্দোলনকারীরা একের পর এক মিছিল ও স্লোগানে মুখর করে তুলেছেন পুরো ভবন এলাকা।
তাদের স্লোগানগুলোও ছিল দৃঢ় প্রত্যয়ের বহিঃপ্রকাশ:
“শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই”,
“মেয়র নিয়ে টালবাহানা, সহ্য করা হবে না”,
“নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমার ভুলি নাই”।
ইতিমধ্যে গেল ১৫ মে থেকে চলমান এই আন্দোলনের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নাগরিক সেবাগুলো একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। হাজারো মানুষ প্রতিদিন সেবা নিতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন,
“আমরা জানি না কেন এখনো ইশরাক ভাইকে শপথ পড়ানো হচ্ছে না। তিনি জনগণের নির্বাচিত মেয়র, অথচ তার হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। যতদিন প্রয়োজন তালা থাকবে নগর ভবনের প্রতিটি দপ্তরে।”
তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা নিজেদের মতামত জানাতে কুণ্ঠিত হননি। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সাজেদুর রহমান বলেন,
“সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি স্তরের মানুষ ইশরাক ভাইকে মেয়র হিসেবে চায়। আমাদের দাবি যৌক্তিক, তাই আমরা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছি।”
ইশরাক হোসেনের এই মেয়রত্ব ঘিরে ঘটনাপ্রবাহের শুরু হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে। সেবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে জয়ী ঘোষণা করা হলেও, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ইশরাক ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদালতে মামলা করেন।
এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ওই ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেয়। নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিতও করে। কিন্তু শপথ অনুষ্ঠানটি যেন না হয় – এই মর্মে গত ১৪ মে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়।
সেই আইনি প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট রিট আবেদন খারিজ করে দেয় এবং আর কোনো বাধা না থাকায় ইশরাককে শপথ পড়ানোর নির্দেশ দেয়।
শুনানির রায়ের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে ইশরাক সমর্থকেরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শপথ পড়ানোর সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক এই টানাপোড়েনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সেবা পড়েছে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ে। তবে হাইকোর্টের আদেশের পর পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয় – আদৌ কি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন করে সঙ্কটের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে?