সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে ঘটে গেল উত্তপ্ত ও নাটকীয় এক ঘটনা। কোটা সংস্কারসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে দেখা দেয় মুখোমুখি সংঘর্ষ। বিক্ষোভ শুরু থেকে সংঘর্ষে রূপ নেওয়া এই ঘটনাটি মুহূর্তেই পরিণত হয় শহরের আলোচিত ইস্যুতে।
বিকেল প্রায় ৪টা ১০ মিনিটের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের প্রধান ফটক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। এতে পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে। ফটক অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের পার্কিং এলাকায় অবস্থান নেওয়া একাধিক সরকারি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, একাধিক গাড়ির জানালা ও পার্শ্বদিকের কাচ ভাঙচুর করা হয়, এবং কিছু গাড়িতে আগুন ধরানোর চেষ্টাও করা হয়েছিল।
এ ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারা সচিবালয়ের ভেতর অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
সচিবালয়ের মূল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা কড়া প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রথমে লাঠিচার্জ করা হয় এবং পরে ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। পাশাপাশি বিস্ফোরণের মতো শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। জানা গেছে, পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।
বিক্ষোভকারীরা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে চাইলেও নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র উপস্থিতি ও দমনমূলক কৌশলের মুখে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে, তবে নির্দিষ্ট সংখ্যাটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় জোর করে প্রবেশ, ভাঙচুর ও সহিংস আচরণ আইনগতভাবে সম্পূর্ণ অনুচিত এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে পরিস্থিতি আরও বিস্তৃত না হয়।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সচিবালয়ে প্রবেশ করেছিল, কিন্তু পুলিশ অকারণে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে। তারা আরও দাবি করে, জনস্বার্থে ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বললেই আজকে দেশে এমন দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়।
সচিবালয়ের আশপাশের এলাকার যানচলাচলও এ সময় ব্যাহত হয়। পুরো মতিঝিল, পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় তৈরি হয় তীব্র যানজট। অনেক পথচারী আতঙ্কে আশ্রয় নেন আশপাশের ভবন ও দোকানে।
এই ঘটনায় জনমনে আবারও প্রশ্ন উঠেছে—ছাত্রদের দাবি শোনা ও আলোচনার বদলে প্রতিবার কেনই বা বলপ্রয়োগের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে? আন্দোলনকে দমন না করে কি তা সমাধানের পথে এগোনো যেত না?
সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, সচিবালয় চত্বরজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা জারি ছিল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে আবারও কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারে বলে জানা গেছে।