সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভে অংশ নেয় শত শত শিক্ষার্থী। গাড়ি ভাঙচুরের পর লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আহত বহু শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন।
রাজধানীর সচিবালয়ে এক নজিরবিহীন বিক্ষোভের দৃশ্য দেখা গেছে মঙ্গলবার বিকেলে। দুপুর থেকেই শিক্ষা ভবনের সামনে জড়ো হতে শুরু করে শত শত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী। মিছিল নিয়ে এগিয়ে এসে তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর বিকাল পৌনে ৪টার দিকে জোর করে সচিবালয়ের প্রধান গেট অতিক্রম করে তারা ভেতরে প্রবেশ করে।
প্রবেশের পরপরই বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ৭ ও ৮ নম্বর ভবনের সামনে থাকা গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এতে সচিবালয়ে মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়। ব্যবহার করা হয় লাঠিপেটা, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড। ঘটনাস্থল পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এই হামলায় অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের ধাওয়ার সময় অনেকে অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর সোয়া ২টা থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রথমে শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিলেও বিকালের দিকে উত্তেজনা বাড়ে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে। তারা ‘দুর্নীতির বিচার চাই’, ‘ভুয়া ফল বাতিল করো’, ‘অবিলম্বে পুনঃমূল্যায়ন করো’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি দল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে নিহত-আহতদের জন্য এবং ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়। অপর দলটি ছিল এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের ফল পুনঃমূল্যায়নের দাবিতে সচিবালয়ের ফটকে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা।
সচিবালয়ে প্রবেশের ১৫ মিনিটের মাথায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পুরো জায়গা খালি করে দেয়। কিন্তু বের হওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা সচিবালয় লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এই বিক্ষোভে প্রায় দুই ঘণ্টা সচিবালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো লিখিত মামলা দায়ের হয়নি, তবে পুলিশ জানিয়েছে, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ তাদের অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না, বরং তাদের দমন করা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সরকারি এলাকায় ভাঙচুর ও জোরপূর্বক প্রবেশ আইনবিরুদ্ধ, তাই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষার্থীদের এই হঠাৎ সচিবালয় প্রবেশ ও ভাঙচুর নতুন প্রজন্মের ক্ষোভ ও হতাশারই বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষা ব্যবস্থা, ফল পুনঃমূল্যায়ন ও দুর্ঘটনার সত্য উদঘাটনে সংশ্লিষ্টদের এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলনের আশঙ্কা রয়েছে।