close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সবার মাথায় হাত, মালেকের বাজিমাত

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
করোনাকালে দুর্নীতির বিস্ফোরণ! সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তাঁর ছেলে শুভ্রর বিদেশে টাকা পাচারসহ ১২২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ফাঁস করলো দুদক।..

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দুতে এখন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একসময় শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এই মন্ত্রী, আজ কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধানের মুখে। করোনা মহামারির ভয়াবহ সময়ে যখন গোটা দেশ বিপর্যস্ত, তখন নিজের এবং পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে বেছে নিয়েছেন দুর্নীতির মহাসড়ক।

অভিযোগ: বিদেশে পাচার, অনিয়ম, লুটপাট আর অবৈধ জমি দখলের মহোৎসব
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ নিয়ে জাহিদ মালেক টেস্ট কিট, ভুয়া মাস্ক, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা খাতে অনিয়মের মাধ্যমে গড়েছেন ১২২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। এর মধ্যে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচার করেছেন বিদেশে।

তাঁর ছেলে রাহাত মালেক শুভ্র বাবার ছায়াতলে দাঁড়িয়ে ৬৬৩ কোটি টাকার ব্যাংক লেনদেনসহ নানা দুর্নীতির জাল বিস্তার করেছেন। তাঁদের নামে এবং বেনামে ৬০৫৩ শতাংশ জমির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

দুদক ইতিমধ্যে জাহিদ মালেক ও রাহাত মালেকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেছে। অনুসন্ধান বলছে, জাহিদ মালেক ৩৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনকভাবে লেনদেন করেছেন ১৪৩ কোটি টাকার বেশি। তাঁর ছেলের ৫১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের পরিমাণ ৬৬৩ কোটি টাকা।

এছাড়া, শুধুমাত্র জমির হিসাবেই জাহিদ মালেক ও তাঁর পরিবারের নামে ৬০৫৩ শতাংশ জমির সন্ধান পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে তদন্ত দল।

করোনাকালে জনগণ যখন চিকিৎসার জন্য হাহাকার করছিল, তখন এই পরিবার চিকিৎসা সামগ্রী ও সরঞ্জাম কেনার নামে লুটপাটে মেতে ওঠে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনার সময় অন্তত ৫১টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়মবহির্ভূতভাবে কোটি কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়। সরবরাহকৃত অনেক সামগ্রীর গুণগত মান ছিল না বললেই চলে।

এই চুক্তিগুলোর পেছনে ‘কমিশন বাণিজ্য’ ছিল মূল চালিকা শক্তি। অভিযোগ আছে, রাহাত মালেক প্রতিটি চুক্তিতে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন আদায় করেছেন।

দুর্নীতির বিস্তারে কেবল মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগই নয়, বরং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভেতরেও ছিল একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাহাত মালেক ও অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপন।

অনুসন্ধান বলছে, এক কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু নিজের এবং আত্মীয়স্বজনদের নামে ২০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান খুলে অন্তত ৭২টি দরপত্রে ৩১৮ কোটি টাকার চুক্তি আদায় করেছেন। এর মধ্যে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা জালিয়াতির মাধ্যমে নাম বদলে এখনো ঠিকাদারি করে চলেছে।

২০২৪ সালের টিআইবি ও এডিবির গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৫ বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল এবং মন্ত্রী পর্যায়ে হাসপাতাল নির্মাণ, স্থাপনা উন্নয়ন এমনকি যন্ত্রপাতি কেনার সিদ্ধান্তে প্রভাব খাটিয়েছে। ফলে জনগণ পেয়েছে নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা, আর মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি গড়েছেন টাকার পাহাড়।

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব প্রমাণ সংগ্রহ শেষে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখনো পর্যন্ত জাহিদ মালেক কিংবা তাঁর ছেলে রাহাত মালেক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জাহিদ মালেক এবং তাঁর পরিবারের এই অবৈধ সম্পদের পাহাড় কেবল শুরু। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য খাতের এই দুর্নীতি শুধু ব্যক্তিগত নয় — এটি পুরো ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ।

कोई टिप्पणी नहीं मिली