বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন তার অভিনয়, মডেলিং ও চলচ্চিত্রে ভিন্নধর্মী কাজের মাধ্যমে দর্শক হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। একের পর এক ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নজর কেড়েছেন। বলিউডের সিনেমায় অভিনয় থেকে শুরু করে কান চলচ্চিত্র উৎসবের লালগালিচায় প্রশংসিত হওয়া— প্রতিটি ধাপে তিনি প্রমাণ করেছেন নিজের প্রতিভা ও সক্ষমতা।
তবে শুধু অভিনয়ের মাধ্যমেই নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও সরব থাকতে দেখা গেছে বাঁধনকে। বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন অন্যতম কণ্ঠস্বর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে রাজপথ— সব জায়গায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সাধারণ মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সোচ্চার হয়ে তিনি বহুবার আলোচনায় এসেছেন।
কিন্তু জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে নেতিবাচক সমালোচনা ও আক্রমণও পিছু ছাড়েনি তার। গত মার্চ মাসের শেষের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একাংশ তাকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিল। বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেই ব্যঙ্গ করে পোস্ট করেছিলেন— “আবারও র এজেন্ট হয়ে গেলাম— কী দারুণ এক যাত্রা!”। তার এই ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়া তখন অনেককে ভাবিয়ে তুলেছিল, আবার অনেকেই তার সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছিলেন।
কিন্তু সম্প্রতি নতুন এক বিতর্কে জড়ালেন এই অভিনেত্রী। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখলেন, “আমি জীবনের সবচেয়ে ভালো সময়গুলো কাটাচ্ছি। আমাকে গালি দেওয়ার শব্দভাণ্ডার আপগ্রেড হয়েছে— এখন নতুন শব্দ হলো ‘নাগিন’!” এরপর তিনি রসিকতা করে যোগ করেন, “মানুষ আমাকে নানা নামে ডেকেছে। কিন্তু এই নামটা একদম নতুন। সত্যি বলতে নাগিন নামটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সবাই রাস্তা খালি করেন, শহরে নাগিন আজমেরী হক।”
তার এই ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক নেটিজেন মজা করে মন্তব্য করতে থাকেন। কেউ কেউ হাস্যরসের ভঙ্গিতে প্রতিক্রিয়া জানালেও, আবার অনেকেই মানসিক সমর্থন দিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকে লিখেছেন— এভাবেই সমালোচনাকে জবাব দেওয়া উচিত।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো, বাঁধন শুধু একজন অভিনেত্রী নন; তিনি নিজস্ব চিন্তা, রসবোধ ও দৃঢ় মানসিকতার মানুষ। সমালোচনাকে যে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে সেটিকে রসিকতায় পরিণত করা যায়— সেটি তিনি সমাজকে নতুন করে দেখালেন।
বিনোদন জগতে আজমেরী হক বাঁধনের পথচলা একেবারেই আলাদা। তার প্রতিটি কাজ আলোচনায় এসেছে নতুনত্বের জন্য। আবার ব্যক্তিগত জীবনের সাহসী অবস্থানও তাকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। সমালোচনা বা সাইবার বুলিং তার জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু যেভাবে তিনি এসব আক্রমণকে সামলে নেন, তা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলে।
বর্তমানে তিনি নতুন কিছু প্রজেক্টে যুক্ত আছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। অন্যদিকে সামাজিক বিষয়ে তার সক্রিয় উপস্থিতি প্রমাণ করে, তিনি শুধু রূপালি পর্দার নায়িকা নন, সমাজেরও একজন দায়িত্বশীল নাগরিক।
সাইবার বুলিদের উদ্দেশে তার এই স্যাটায়ার হয়তো আক্রমণকারীদের জন্য বড় জবাব হয়ে থাকবে। আর সাধারণ মানুষের কাছে এটি একটি বার্তা— সমালোচনার জবাব সবসময় রাগ দিয়ে নয়, কখনো কখনো হাস্যরস দিয়েই সবচেয়ে শক্তিশালী উত্তর দেওয়া যায়।