সাতক্ষীরার জাহাঙ্গীর কবীরের গাড়িতে যাত্রী সেজে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে প্রতারণা ..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা avatar   
শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা
যাত্রী হিসেবে গাড়িতে সাক্ষাৎ। তারপর পরিচয়ের সূত্র ধরে কারো ভাই, কারো বোন বা কাউকে মা ডেকে স্বার্থ হাসিল করে থাকেন  প্রতারক জাহাঙ্গীর কবীর..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা :

যাত্রী হিসেবে গাড়িতে সাক্ষাৎ। তারপর পরিচয়ের সূত্র ধরে কারো ভাই, কারো বোন বা কাউকে মা ডেকে স্বার্থ হাসিল করে থাকেন  প্রতারক জাহাঙ্গীর কবীর। অথচ তার পরিচয় কেউ জানে না। জানে না তার পেশার কথা। গত আট মাসে জাহাঙ্গীরের হাতে প্রতারিত হওয়া কমপক্ষে ছয়জন নারী ও পুরুষকে রাখা হয়েছে হুমকির মধ্যে। দ্বিতীয়বার দেখা না করতে চাওয়ায় স্বামীর কাছে বা পরিবারের কাছে ভিডিও এডিট করে পাঠিয়ে সংসার ভেঙে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ওই জাহাঙ্গীর কবীর। সম্প্রতি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ফতেপুর, জিরেনগাছা, তালার জালালপুর, যশোরের শার্শা উপজেলার সাত মাইল ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

কালিগঞ্জের ফতেপুর গ্রামের আলফাজ হোসেনের ছেলে নয়ন ইসলাম তৃতীয় মাত্রাকে বলেন, প্রায় নয় মাস আগে একদিন বিকেল চারটার দিকে তারা পাঁচজন দুটি মোটর সাইকেলে দেবহাটায় যাচ্ছিলেন। ভদ্রখালি মোড়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় এক বৃদ্ধকে ধাক্কা দেয় তার বন্ধু রাকিবুল। সেখানে তার মোটর সাইকেল আটকে দেয় স্থানীয়রা। তিন দিন পর ওই বৃদ্ধ মারা গেলে ৭০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের মোটর সাইকেল ছাড়িয়ে আনতে হয়। কিন্তু দুর্ঘটনার পরদিন ওই বৃদ্ধকে অ্যম্বুলেন্সে খুলনা মেডিকেলে পাঠানো হলেও বাসে যাওয়ার সময় রাকিবুলের মা ও ফুফুর সাথে পরিচয় হয় জাহাঙ্গীর কবীরের। সে চলে যায় হাসপাতালেও। গড়ে তোলে সখ্যতা। রাকিবুলকে ভাই ও মাকে মা ডাকতে শুরু করে জাহাঙ্গীর। আসতো তাদের বাড়িতে। ১০ হাজার টাকাসহ বায়োডাটা, জাতীয় পরিচয়পত্র, স্ট্যাম্প সাইজের রঙিন ছবি নিয়ে তার ও রাকিবুলকে সাতক্ষীরা কোর্টের আইনজীবী সহকারিতে চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে সাতক্ষীরা জজ কোর্ট এলাকার প্যারাডাইস হোটেলে রেখে দেয় কয়েকদিন। এর আগে রাকিবুলের বোনের খির খাওয়া অনুষ্ঠানে ওঠা আড়াই হাজার টাকা ও রাকিবুলের মায়ের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে পরে দেওয়ার কথা বলে জাহাঙ্গীর। একপর্যায়ে হোটেলে খাবারের সাথে চেতনানাশক খাওয়াতো জাহাঙ্গীর। পরে তাদেরকে চেতনানাশক খাইয়ে ঘুমিয়ে পড়া অবস্থায় কাছে থাকা আটশত টাকা ও দুটি মোবাইলসহ জামা কাপড় নিয়ে সটকে পড়ে জাহাঙ্গীর।  এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১০০ টাকা চেয়ে বাসে মুহষকুড় আসেন রাকিবুল ও নয়ন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে তারা বাড়িতে পৌঁছায়। এরপরও বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে মোবাইল ফোনে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে জাহাঙ্গীর কবীর। সে তার নিজের বাড়ি আশাশুনি উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে বললেও চেষ্টা করে তার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রাকিবুলের ছোট চাচার কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা নিয়েছে বলে জানা গেছে।

একইভাবে তালা উপজেলার জালালপুরের তুহিন ঘোষ ও শার্শার তুফান নামের এক যুবকের সাথে যথাক্রমে বাসে ও ইজিবাইকে পরিচয় সূত্রে তাদের পরিবারের সাথে সখ্যতা রেখে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে চার মাস আগে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় জাহাঙ্গীর কবীর। একইভাবে তাদেরকে পৃথকভাবে প্যারাডাইস হোটেলের ১১ নং রুমে রেখে ভাতের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে মোবাইল ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় জাহাঙ্গীর কবীর। এখনও জাহাঙ্গীর কবীর বিভিন্ন সময়ে নয়ন ও রাবিকুলকে সাতক্ষীরায় তার সাথে দেখা করার জন্য ও পূর্বের ঘটনা কাউকে না বলার জন্য ভয় দেখাচ্ছে।

কালিগঞ্জের জিরেনগাছার হিন্দু সম্প্রদায়ের এক সন্তানের জননী তৃতীয় মাত্রাকে জানান, তার শ্বশুরবাড়ি তালা উপজেলার ফতেপুর এলাকায়। স্বামী বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়ায় মাঝে মাঝে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যেতেন তিনি। তালা মুক্তিযোদ্ধা কলেজ থেকে তার এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে কালিগঞ্জ থেকে বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই জাহাঙ্গীর কবীরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। জাহাঙ্গীর নিজেকে বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক বলে পরিচয় দেয়। নিজের ফোনে টাকা না থাকায় কল করতে পারছেন না বলায় জাহাঙ্গীর নাম্বার চেয়ে তাকে ২০ টাকা ভরে দেয়। এরপর থেকে জাহাঙ্গীর তার সাথে নিয়মিত কথা বলতো। এক মাস আগে সে তার বাচ্চাকে নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে তালা মুক্তিযোদ্ধা কলেজে যাওয়ার সময় বাসে নলতা পৌঁছানোর পরপরই তাকে ফোন দেয় জাহাঙ্গীর। মেয়ের জন্মদিন বলে তাকে শহরের খুলনা রোডের মোড়ে বাস থেকে নামতে বলে জাহাঙ্গীর। ভ্যানে করে সন্তানসহ তাকে সার্কিট হাউজ মোড় এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যায় জাহাঙ্গীর। সেখানে কেউ না থাকায় চলে আসতে গেলে তাকে দুপুরের খাওয়ার হিসেবে এক প্যাকেট বিরিয়ানি খেতে দেয়। কিছুক্ষণ পর ওই নারী সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর থেকে তাকে আবারো বাসায় দেখা করার কথা বলে জাহাঙ্গীর। রাজী না হওয়ায় তার মায়ের নাম্বার ও স্বামীর নাম্বার জোগাড় করে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দেয় জাহাঙ্গীর। তাকে বিয়ে করা হয়েছে এমন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটানার হুমকিও দেওয়া হয়। তার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে অপহরণের হুমকি দেয় জাহাঙ্গীর কবীর। ভয়ে ওই নারী পরীক্ষায় বসেনি। এরপরও হুমকি অব্যহত আছে।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর কবীরের ব্যবহৃত ০১৫৪০-৫৪৮১৩৮, ০১৬১০-৪৪৩৪১৫ ও ০১৯১৩-৫৪৫৫৬৯ নং মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

نظری یافت نشد