চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি উচ্চ বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষক থাকলেও এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে চারজনই ফেল করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল চিত্র স্পষ্ট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার এক প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলাতুলি উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন মোট সাতজন। তবে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এই বিদ্যালয় থেকে অংশ নেয় মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী, এবং এর মধ্যে চারজনই ফেল করেছে—যা শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যদশার করুণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, পাঁচজন পরীক্ষার্থীর সবাই মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে কেবল একজন উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হয়েছে। অবশিষ্ট চারজন অকৃতকার্য হয়। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে এসএসসির ফল প্রকাশের পর এ তথ্য নিশ্চিত করে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নওশাদুজ্জামান জানান, “এই বিদ্যালয় থেকে এ বছর মোট সাতজন শিক্ষার্থী এসএসসির জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিল। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র পাঁচজন—তাদের মধ্যে ৩ জন ছেলে ও ২ জন মেয়ে। বাকি দুইজন পরীক্ষায় অংশই নেয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “বিদ্যালয়টি দূরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এখানকার মানুষ প্রধানত নিম্নআয়ের। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের কাজে যুক্ত থাকে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের প্রবণতা আছে। ছেলেরাও ক্লাসে অনিয়মিত। এতে পড়ালেখার মানে ধস নেমেছে।”
এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক নেই বলে জানান তিনি। “আমাদের বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হলেও ইংরেজি শিক্ষক না থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আগামীতে শিক্ষার মান উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে,” বলেন প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সালমা আক্তার বলেন, “যেসব বিদ্যালয়ের ফল খারাপ হয়েছে, তাদের নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে।”
রাজশাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ. ন. ম মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোট পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১,৮২৪ জন শিক্ষার্থী। জেলার সার্বিক ফল ভালো হলেও আলাতুলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ফল আশানুরূপ নয়।”
এই ফলাফলের পেছনে শুধু শিক্ষার্থী নয়, দায় রয়েছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, শিক্ষকের অভাব এবং স্থানীয় সামাজিক বাস্তবতারও। বাল্যবিবাহ, দারিদ্র্য, অনুপস্থিতি এবং শিক্ষক সংকট মিলিয়ে আলাতুলির শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র পরিসংখ্যান দিয়ে নয়, এই ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বাস্তব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করাই এখন জরুরি।