close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সাত রুটে অ স্ত্র ঢুকছে বাংলাদেশে

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Illegal arms are being smuggled into Bangladesh through seven secret routes from Myanmar. At least five syndicates led by Rohingya traffickers are involved, channeling the weapons to militant groups i..

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখন অবৈধ অস্ত্র পাচারের অন্যতম হটস্পট। তদন্তে উঠে এসেছে, মিয়ানমার থেকে অন্তত সাতটি সীমান্ত পথ ব্যবহার করে অবৈধ অস্ত্রের চালান প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। এই ভয়াবহ অস্ত্র বাণিজ্যে জড়িত অন্তত পাঁচটি চক্র, যার প্রতিটিতে রোহিঙ্গা সদস্যরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এসব অস্ত্র কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও মিয়ানমার থেকে অস্ত্র প্রবাহ এতটা প্রবল ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি মাদকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অস্ত্র পাচার বেড়ে গেছে। এমনকি মানবপাচারকারী দলগুলিও এখন এই অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহীন জানিয়েছেন, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের মরাগাছতলায় ৫ অক্টোবর এক অভিযানে দুটি অগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচটি কার্তুজ ও দুই হাজার ইয়াবাসহ পাঁচ মাদক কারবারিকে আটক করা হয়। তারা স্বীকার করেছে, অস্ত্র ও মাদক মিয়ানমার সীমান্ত থেকে নিয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সীমান্তের এত কাছাকাছি যে, পাচারকারীরা খুব সহজেই এসব অস্ত্র দেশে এনে অপরাধীদের হাতে তুলে দিচ্ছে।

বিজিবির কক্সবাজার রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গত তিন মাসে বিজিবি সদস্যরা ২২টিরও বেশি দেশি ও বিদেশি অস্ত্র আটক করেছে। এতে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটার জুড়ে সাতটি প্রধান রুট দিয়ে পাচারকারীরা অস্ত্র আনছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত রুট হলো নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশফাঁড়ি, ঘুমধুমের বালুখালী কাস্টমস ঘাট, উখিয়ার পালংখালী ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নলবনিয়া এলাকা। এসব দুর্গম পাহাড়ি পথ দিয়ে বেশির ভাগ অস্ত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছায়।

এছাড়া নাফ নদীর জলপথ ব্যবহার করে টেকনাফের লেদা, দমদমিয়া, জাদিমুরা, নয়াপাড়া ও বরইতলী খাল দিয়েও অস্ত্র পাচার হয়। এসব রুটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা চক্র থাকলেও জাদিমুরা পয়েন্টে স্থানীয় কয়েকজনও জড়িত বলে জানা গেছে।

তদন্তে জানা গেছে, পাচারে সক্রিয় পাঁচটি বড় চক্রের মধ্যে চারটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠন — আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), হালিম গ্রুপ ও নবী হোসেন গ্রুপ। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদেরও একটি বড় অংশ এতে যুক্ত রয়েছে।

সাধারণ রোহিঙ্গারা জানায়, হালিম গ্যাংয়ের প্রধান কেফায়েত উল্লাহ বা আব্দুল হালিম কুতুপালং ক্যাম্প-৭ এ নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, হালিম মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে দখলকৃত বিজিপি ঘাঁটি থেকে লুট করা অস্ত্র প্রদর্শন করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অস্ত্রগুলোর বড় অংশ বাংলাদেশে পাচার হয়েছে।

র‍্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান জানান, গত দেড় বছরে র‍্যাবের অভিযানে ১,২৭৯টি অস্ত্র উদ্ধার ও ১৬৩ জন অস্ত্রধারীকে আটক করা হয়েছে।

তদন্তে আরও জানা গেছে, এসব অস্ত্রের উৎস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক অনুপ্রবেশের পর সেখানে আরাকান আর্মির উত্থান ঘটে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে তারা মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নেয়। এ সময় তারা মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষী বিজিপির ঘাঁটি দখল করে প্রচুর অস্ত্র হাতে পায়।

সেই অস্ত্রের অংশ এখন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, রোহিঙ্গা চক্র ও স্থানীয় পাচারকারীদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। খাদ্য ও টাকার বিনিময়ে অস্ত্র বিক্রির এই প্রবণতা সীমান্ত এলাকায় নতুন এক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যতদিন চলবে, বাংলাদেশে অস্ত্র পাচারের ঝুঁকি ততই বাড়বে। তাই সীমান্ত নজরদারি আরও কঠোর করা ছাড়া বিকল্প নেই।

Nessun commento trovato


News Card Generator