আসছে টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিপাত। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের আট বিভাগেই মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বন্যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সতর্ক সংকেত: টানা পাঁচ দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, বন্যার শঙ্কা বাড়ছে
বাংলাদেশের জন্য শুরু হয়েছে আরেক দফা প্রাকৃতিক সতর্কতা। মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় অবস্থার কারণে আগামী পাঁচ দিন দেশজুড়ে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ ভারী বর্ষণের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৮ আগস্ট শুক্রবার প্রকাশিত ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে টানা বৃষ্টির ফলে দুর্ভোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পেরিয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই অবস্থায় মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি আকারে বিরাজ করছে, যা টানা বৃষ্টিপাতের মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ অঞ্চলে এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের কিছু কিছু এলাকায় হতে পারে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ, যা জনজীবনকে স্থবির করে দিতে পারে।
শনিবার (৯ আগস্ট) পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং অন্যান্য বিভাগে কিছু কিছু স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ওই দিন কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একইসাথে কিছুটা তাপমাত্রা বাড়তে পারে, যা ভ্যাপসা গরম ও অস্বস্তি বাড়াবে।
রোববার (১০ আগস্ট) থেকে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) পর্যন্তও আবহাওয়ার উন্নতি হবে না। বরং এই সময়টাতে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগে দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত চলতে থাকবে। ১১ ও ১২ আগস্টে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সারাদেশেই দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এতে সাময়িক স্বস্তি এলেও ভারী বর্ষণের কারণে পানি জমে যাওয়া, নদীর পানি বাড়া এবং নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই প্রবণতা আগামী পাঁচ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল ও নদীভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোতে ঝুঁকি বেশি। নদী অববাহিকার এলাকায় পানি বাড়ার ফলে হঠাৎ বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।
প্রশাসনের পক্ষ থেকেও স্থানীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে জরুরি সহায়তা দেওয়া হবে। নদীপথে যাতায়াত বন্ধ রাখার পরামর্শও দেওয়া হতে পারে।
এই টানা বৃষ্টিপাত কেবল জনজীবনকেই বিপর্যস্ত করবে না, বরং কৃষি ও অবকাঠামোতেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে আমন ধানের চারা নষ্ট হওয়া, জলাবদ্ধতায় সড়ক ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি এবং পাহাড়ি ঢলে প্লাবনের আশঙ্কা প্রকট হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠ, উঁচু গাছ কিংবা টিনের ছাউনি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষণ আপাতত নেই। তাই দেশজুড়ে নাগরিকদের প্রস্তুত থাকার এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে।