বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এক সময়ের বিতর্কিত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি। এক দশকের বেশি সময় আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই জামায়াত নেতা সম্প্রতি মুক্তি পাওয়ার পর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে একটি বিশেষ মন্তব্য ঘিরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) লেখেন:
“হয়তো সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী আমাদের মাঝে আজ এভাবেই ফিরে আসতে পারতেন!”
এই বক্তব্য সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় প্রবল বিতর্ক। একদিকে অনেকেই এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক বিদ্রোহ ও বিচারিক প্রশ্নবিদ্ধতার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন এটি একটি স্বাধীন মতামতের প্রকাশ।
সারজিস আলমের এই পোস্টের নিচে নানান ধরনের মন্তব্য দেখা যায়। একজন ‘সাজু’ নামের ব্যবহারকারী লিখেছেন:
“ন্যায় বিচারকের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
অন্যদিকে, আরেকজন আশিক মন্তব্য করেন,
“সরকার ভদ্রতা দিয়ে টিকে থাকতে পারবে না। শক্ত হতে হবে। আওয়ামী গুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে। নয়তো ঝামেলার শেষ হবে না।”
এই দুই বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করে দেয়, এটি শুধু একটি ব্যক্তিগত অভিমত নয়; বরং দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা, যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং রাজনৈতিক মতভিন্নতার জায়গা থেকে এটি এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটিএম আজহারের মুক্তি এবং সারজিস আলমের পোস্ট শুধু একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নয়, বরং এটি যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সাধারণ জনগণের বিশ্বাস, বিচার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা, এবং রাজনৈতিক শক্তির রূপান্তর ইঙ্গিত করে।
এদিকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও এই ইস্যুতে নিজেদের মত প্রকাশ করতে শুরু করেছে। কেউ কেউ বলছেন, “যুদ্ধাপরাধের বিচার যখন আন্তর্জাতিক মানে হয় না, তখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে বাধ্য।” আবার অন্যপক্ষ মনে করেন, “সাজাপ্রাপ্ত একজন যুদ্ধাপরাধীর মুক্তি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।”
এই বিষয়ে এখনো সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিতর্ক শুধু সামাজিকমাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকবে না, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ইস্যু দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
শেষ পর্যন্ত সত্যিই কি সাঈদী বা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো বিতর্কিত রাজনৈতিক চরিত্ররা ফিরে আসার সুযোগ পেতে পারতেন? অথবা এটিএম আজহারের মুক্তি কোনো রাজনৈতিক চুক্তির ইঙ্গিত বহন করে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো সামনে আসবে, তবে আপাতত সারজিস আলমের একটি মন্তব্য ঘিরে রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।