৯ বছর পেরিয়েও আইনি নিরবতা: সালাহউদ্দিন ‘গুম’ রহস্যে নতুন করে প্রশ্ন ইলিয়াস হোসেনের
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির তৎকালীন মুখপাত্র এবং যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি—তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ধারী কিছু লোক তুলে নিয়ে যায়। এরপর দুই মাস ধরে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। দেশে-বিদেশে আলোচনা, উদ্বেগ এবং মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবাদ চলাকালে হঠাৎ জানা যায়, সালাহউদ্দিন ভারতের শিলংয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
‘গুম’ থেকে হাসপাতাল—কিন্তু মাঝের রহস্য আজও অমীমাংসিত
ভারতের আদালতের সামনে সালাহউদ্দিন দাবি করেছিলেন, তিনি বাংলাদেশ থেকে অপহৃত হন এবং জ্ঞান ফিরে পান ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। কীভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে তিনি ভারতে পৌঁছালেন, কে তাঁকে সেখানে ফেলে গেল—এসব প্রশ্ন আজও অজানা।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই ঘটনাকে ঘিরে এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা, জিডি বা তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়নি। কোনো গুম কমিশনে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়নি বলেও জানা গেছে। বিষয়টি অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হচ্ছে।
ইলিয়াস হোসেনের স্ট্যাটাস: কেন এই নিরবতা?
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন শনিবার (২৪ মে) সকালে নিজের ফেসবুক পেজে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি লেখেন,
“বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কোথা থেকে গুম হয়েছিলেন, কীভাবে ভারতে গেলেন, এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত তিনি গুম কমিশন বা কোনো থানায় মামলা কিংবা আইনি উদ্যোগ নেননি—এটা আমরা জানতে চাই।”
তার এই মন্তব্য ঘিরে আবারও আলোচনায় উঠে আসে সালাহউদ্দিন ‘গুম’ ইস্যু। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এত বড় ঘটনা—তবুও কেন কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলো না? সত্যিই কি বিএনপি নেতৃত্ব এই বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি, না কি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা?
গণমাধ্যমের নীরবতা, মানবাধিকার সংস্থার জিজ্ঞাসা
এই ঘটনায় শুরুতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরব থাকলেও, পরবর্তী সময়ে বিষয়টি গণমাধ্যম ও মানবাধিকার মহলে অনেকটাই চাপা পড়ে যায়। সালাহউদ্দিন নিজেও দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেননি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি আইনগত কোনো অভিযোগ দাখিল না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনাগুলোর বিচার পাওয়া আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া একটি রাজনৈতিক দলের একজন শীর্ষ নেতার গুম এবং আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রমের ঘটনা এমনিতেই একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে থাকে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
২০১৫ সালে ঘটনাটি যখন ঘটে, তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ছিল উত্তপ্ত। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র বিরোধ, আন্দোলন, অবরোধ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ছিল অনিশ্চয়তায় ভরা। অনেকেই মনে করেন, সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে রাজনীতি গভীরভাবে জড়িত।
তবে ভারত থেকে ফিরে আসার পরও তিনি কোনোভাবেই এই ঘটনার আইনি সমাধানের চেষ্টা করেননি, যা এ ঘটনার রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে।
জবাবদিহি চাই জনগণের, চাই আইনি পদক্ষেপ
একজন নাগরিক হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমেদের নিরাপত্তা, অধিকার ও অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রয়েছে সবার। যদি সত্যিই তাঁকে গুম করা হয়ে থাকে, তবে তার তদন্ত হওয়া উচিত। আর যদি এটি অন্য কোনো প্রেক্ষাপটের ঘটনা হয়, তবুও সেটি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।