সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলা বাতিল ও জামিন আবেদনের শুনানি আজ হাইকোর্টে অনুষ্ঠিত হবে। আলোচিত এই মামলাটি ঘিরে আদালতকক্ষে উত্তেজনা ছড়ালেও আজকের শুনানি নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনায় সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হককে আসামি করে দায়ের করা হত্যা মামলা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আজ রোববার (১৭ আগস্ট) শুরু হচ্ছে বহুল আলোচিত শুনানি। মামলাটি বাতিল ও জামিন চেয়ে খায়রুল হক যে আবেদন করেছেন, তার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে।
আইনজীবী মহলে তুমুল আলোচনার জন্ম দেওয়া এই মামলার কার্যক্রম প্রথম থেকে বিতর্কিত। এর আগে ১১ আগস্ট আদালতে শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা, হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। আদালত একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আজকের তারিখে শুনানির দিন ধার্য করেন।
খায়রুল হককে আসামি করা মামলার পটভূমি গত জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। নিহতের বাবা আলাউদ্দিন এই ঘটনায় গত ৬ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ ৪৬৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২৪ জুলাই সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেদিনই আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হলে তার আইনজীবীরা পুনরায় হাইকোর্টে আবেদন করেন।
খায়রুল হকের আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দেখান যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন এবং তার বয়স ৮১ বছর। তিনি দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি হওয়ায় পালিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এক বছর আগের ঘটনা দেখিয়ে খায়রুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ অবশ্য ভিন্ন অবস্থান নেয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাসেল আহম্মেদ আদালতে জানান, এই মামলার শুনানিতে নিজেই অ্যাটর্নি জেনারেল অংশগ্রহণ করবেন। তাই সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু খায়রুল হকের পক্ষের আইনজীবীরা সময় না দিয়ে অবিলম্বে শুনানির দাবি জানান। এ নিয়ে আদালতকক্ষে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং হাতাহাতির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
উল্লেখ্য, খায়রুল হক ২০১১ সালের ১৭ জুন প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন। তিনি পরবর্তীতে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তার বিরুদ্ধে বেআইনি ও বিতর্কিত রায় দেওয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় এবং শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা হয়। এসব মামলার একটিতে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
আজকের শুনানিতে খায়রুল হকের জামিন ও মামলা বাতিল আবেদন মঞ্জুর হবে কি না, সে দিকেই সবার নজর। দেশের আইনজীবী সমাজ, রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ জনগণ—সবারই চোখ আজ হাইকোর্টে। অনেকেই মনে করছেন, এই মামলার রায় শুধু একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির ভাগ্যই নির্ধারণ করবে না, বরং দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভবিষ্যৎও নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।