গভীর রাতে নবাবগঞ্জে চাঞ্চল্যকর অভিযান: সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন গ্রেপ্তার
ঢাকার নবাবগঞ্জের শান্ত এক রাত আচমকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোপন অভিযানে। ২২ জুন, রবিবার দিবাগত রাত, ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ষোল্লা ইউনিয়নের এক গ্রামীণ বাড়ি ঘিরে ফেলে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি বিশেষ দল। এই অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিনকে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সূত্রে জানা যায়, তাকে দীর্ঘদিন ধরেই নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। অবশেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি ওয়ারী বিভাগের একটি দল।
সোমবার সকালে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “সাবিনা আক্তার তুহিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতায় উসকানি এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ততা। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা তাকে গ্রেপ্তার করি।”
ডিবি আরও জানিয়েছে, এই মামলাগুলোর তদন্ত ইতোমধ্যে অগ্রগতি পেয়েছে এবং গ্রেপ্তারের পর তুহিনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হতে পারে।
সাবিনা আক্তার তুহিন এক সময় ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন যুব মহিলা লীগে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার নাম বারবার উঠে এসেছে বিভাজন, বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষে উসকানির অভিযোগে।
তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ইতিপূর্বেও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একাধিক অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, যা তদন্ত চলাকালীন উঠে আসে। এমনকি বিদেশে অর্থপাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারেরও কিছু অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
এদিকে, সাবিনা আক্তার তুহিনের গ্রেপ্তারের খবরে দলীয় অঙ্গনেও দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কিছু নেতা বলেছেন, "আইন সবার জন্য সমান", আবার কেউ কেউ বলছেন "এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল।"
এটিই ছিল না একমাত্র রাজনৈতিক গ্রেপ্তার। একই দিন, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ ফয়সল বিপ্লবকেও গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। রাজধানীর মনিপুরী পাড়ায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধেও জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই সাবেক সংসদ সদস্যের গ্রেপ্তার রাজনীতির ময়দানে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তারা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালাচ্ছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী তৎপরতা ও উসকানির বিষয়ে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তাদের ভাষ্য, “যে-ই হোক, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সাবিনা আক্তার তুহিন বর্তমানে হেফাজতে রয়েছেন এবং তদন্ত শেষে আদালতে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে।