close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

রোহিঙ্গা সংকটে বিস্ফোরণের মুখে দক্ষিণ এশিয়া: জাতিসংঘে বাংলাদেশের সতর্কবার্তা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতিসংঘে জোরালো বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন—রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান না হলে এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তায় ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সংকট আর মানবিক..

রোহিঙ্গা সংকট এখন শুধুই একটি মানবিক বিপর্যয় নয়—এটি দিন দিন রূপ নিচ্ছে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকিতে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই চরম সতর্কবার্তা দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত “আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর দারিদ্র্য, উন্নয়ন ঘাটতি ও সংঘাতের প্রভাব” শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন,রোহিঙ্গা সমস্যা যদি এখনই টেকসই সমাধানের পথে না আনা হয়, তাহলে অচিরেই এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি বৃহৎ নিরাপত্তাজনিত সংকট হয়ে দাঁড়াবে।”

বাংলাদেশ গত ৮ বছর ধরে ১২ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। কিন্তু এর দীর্ঘসূত্রতা এখন জনজীবন, অর্থনীতি ও পরিবেশে প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,

রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের নিজেদের দেশে, নিজেদের অধিকার নিয়ে ফেরত যাওয়ার দাবি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার উত্থাপিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন,এই জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।”

বাংলাদেশের ইতিহাসে তরুণরা সর্বদাই পরিবর্তনের কেন্দ্রে থেকেছে—বলেন উপদেষ্টা। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিপ্লব—সব ক্ষেত্রেই তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন,“যদি তরুণরা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তারা সহজেই চরমপন্থার শিকার হতে পারে।”

এই কথা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

আলোচনায় উঠে আসে দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য এবং উন্নয়নের অসম বণ্টন সংক্রান্ত গুরুতর সমস্যা। এগুলোর সমাধান না হলে সমাজে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতা ও সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে—এমন সতর্কবার্তা দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি প্রখ্যাত নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের “তিন শূন্য নীতি” তুলে ধরে বলেন:আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে থাকবে — শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ।”

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য শান্তি ও উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে একত্রে সমন্বয় করার পরামর্শ দেন তিনি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং নবগঠিত পিসবিল্ডিং কমিশনের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন তৌহিদ হোসেন। তার ভাষায়,শান্তি প্রচেষ্টা যেন শুধু রাজনৈতিক চুক্তিতে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা যেন বাস্তবসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

প্রফেসর ইউনূস প্রবর্তিত ‘সামাজিক ব্যবসা’ মডেলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়, এটি দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সংঘাত প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর একটি পথ। এই মডেল এমন একটি উন্নয়ন কাঠামো তৈরি করতে পারে যেখানে মুনাফার চেয়ে মানুষের কল্যাণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

রোহিঙ্গা সংকট এখন আর একক কোনো জাতির সমস্যা নয়। এই সমস্যা যেমন সীমান্তের ওপারে ছড়িয়ে পড়ছে, তেমনি এটি বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করছে। তাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের এই বার্তা স্পষ্ট—
এই সংকটের সমাধান এখনই দরকার, নইলে চরম মূল্য দিতে হবে পুরো অঞ্চলকে।

לא נמצאו הערות