close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

রেলওয়ের ওয়েম্যানদের জীবন: সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ওয়েম্যানদের জীবন এক কথায় কঠিন পরিশ্রম, সীমিত সুবিধা এবং চরম দায়িত্বের মিশ্রণ। নিরাপদ রেলপথ রক্ষায়
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ওয়েম্যানদের জীবন এক কথায় কঠিন পরিশ্রম, সীমিত সুবিধা এবং চরম দায়িত্বের মিশ্রণ। নিরাপদ রেলপথ রক্ষায় তাদের ভূমিকা অপরিসীম, তবুও তাদের জীবন ও কর্মপরিবেশে রয়েছে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ। ওয়েম্যানদের ভূমিকা ও দায়িত্ব ওয়েম্যানরা রেললাইনের ত্রুটি খুঁজে বের করে তা মেরামত করেন। এ কাজের মধ্যে রয়েছে রেললাইনের পাথর বা স্লিপার পুনরায় স্থাপন, আগাছা পরিষ্কার, লাইন সমান করা, এবং রেলপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রতিদিন প্রায় ৬ কিলোমিটার রেলপথ তারা তদারকি করেন। শীতকাল, বর্ষা, কিংবা গ্রীষ্ম—প্রতিটি ঋতুতেই কাজের ধরণ ভিন্ন ভিন্ন, তবে পরিশ্রমের মাত্রা সবসময়ই চরম। বিশেষ করে বর্ষাকালে লাইন সরে গেলে বা কাদা জমলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। কর্মপরিবেশ ও সময়সূচি ওয়েম্যানদের কাজ দিনের শুরুতে সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয় এবং প্রায় ৫টা পর্যন্ত চলে। কিন্তু সময়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই। "ইমার্জেন্সি" ডাকে দিনে-রাতে যেকোনো সময় হাজিরা দিতে হয়। এমনকি ঈদের দিনেও নামাজ শেষে কাজের জন্য উপস্থিত হতে হয়। অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করলেও এর জন্য নেই কোনো অতিরিক্ত বেতন বা সুবিধা। ঝুঁকি ও স্বাস্থ্য সমস্যা ওয়েম্যানদের কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, তবে তাদের জন্য কোনো ঝুঁকিভাতা নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে চিকিৎসার খরচ নিজেদের বহন করতে হয়। রেলওয়ে হাসপাতালগুলোর অপ্রতুল সেবা তাদের জন্য আরেকটি বড় সমস্যা। সারাক্ষণ পায়ে হেঁটে কাজ করায় তাদের মধ্যে পায়ে ব্যথা, পিঠের সমস্যা, এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার প্রকোপ বেশি। তবুও এ নিয়ে তারা কোনো বিশেষ সুবিধা পান না। নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতি ও অনিয়ম ওয়েম্যান পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পোষ্যকোটা এবং আবাসন সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে নতুন প্রার্থীদের জন্য এ পেশা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও পরিবারিক দায়িত্ব বর্তমানে একজন ওয়েম্যানের বেতন সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। তবে এ বেতনে পরিবারের প্রয়োজন মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে। রুবেলের (ছদ্মনাম) মতো কর্মীরা বাবা-মায়ের পেনশন এবং সীমিত আয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পুরো পরিবার চালান। প্রশাসনিক অবহেলা ও উন্নয়নের অভাব রেলওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষার কাজে নিয়োজিত ওয়েম্যানরা এখনও অবহেলিত। তাদের জীবনমান উন্নয়নে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ঝুঁকিভাতা, নিয়মিত চিকিৎসা সুবিধা, এবং সময়মতো পদোন্নতির ব্যবস্থা না থাকায় তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। উপসংহার ওয়েম্যানরা বাংলাদেশ রেলওয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের পরিশ্রম ও দায়িত্বের গুরুত্ব বিবেচনায় তাদের জন্য আরও উন্নত কর্মপরিবেশ, আর্থিক সুবিধা, এবং ঝুঁকিমুক্ত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রশাসনের সচেতনতা এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। রেলওয়ের উন্নয়ন শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; ওয়েম্যানদের মতো কর্মীদের জীবনের মানোন্নয়নেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
Nenhum comentário encontrado


News Card Generator