ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যকে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনার পরপরই রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের নিরাপত্তা পরিবর্তনের ঘোষণা এলো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে জানান, রাত ৮টার পর থেকে উদ্যানের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ সেশনের মেধাবী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সাম্য। এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর উদ্যানটি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।
এই প্রেক্ষিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে পুনরায় একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক উদ্যোগ। আসিফ মাহমুদ তাঁর স্ট্যাটাসে সাত দফা সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেছেন, যার বাস্তবায়ন হবে দ্রুত এবং সুনির্দিষ্ট সময়ে। এই উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, ডিএমপি, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একসাথে কাজ করবে।
সাত দফা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হলো—
১. রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে, যাতে অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ বন্ধ হয়।
২. অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক বেচাকেনা বন্ধ ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে যৌথ অভিযান পরিচালিত হবে।
৩. নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযান চালাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ে গঠিত হবে একটি স্থায়ী কমিটি।
৪. উদ্যানজুড়ে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি স্থাপন করা হবে, যার কার্যকর মনিটরিং হবে নিয়মিত।
৫. একটি ডেডিকেটেড পুলিশ বক্স স্থাপন করা হবে উদ্যানে, যাতে তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়।
৬. রমনা পার্কের মতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে পুরো উদ্যানজুড়ে।
৭. রাত ৮টার পর জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে, এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
আসিফ মাহমুদ জানান, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। একইসঙ্গে উদ্যান যেন আর কোনো অপরাধের স্থান না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলমান তদন্তে আরও জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরাধীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলেও কড়া হুঁশিয়ারি এসেছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যেখানে দেশের বহু ঐতিহাসিক আন্দোলনের পদচিহ্ন রয়েছে, সেটি যেন অরাজকতা ও অপরাধের অভয়ারণ্য না হয়, সে লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ জনগণের মধ্যে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছে।
সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও নারীদের জন্য এই উদ্যোগ সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি, আলো, সিসিটিভি এবং সময়নিষ্ঠ ব্যবস্থাপনা উদ্যানটিকে আবারও একটি পারিবারিক ও নিরাপদ ভ্রমণস্থানে পরিণত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।