close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড: ইতিহাসের নির্মম অধ্যায়..

Nezam Uddin avatar   
Nezam Uddin
১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত ঘটনা।..

১৯৮১ সালের ৩০ মে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। এই দিনেই চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে যার হাত ধরে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছিল, সেই জিয়াকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেদিন যেন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেই আঘাত করা হয়েছিল। 

### হত্যাকাণ্ডের পটভূমি 

জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রাম সফর ছিল এক রহস্যময় আয়োজন। চট্টগ্রামে বিএনপির দুটি পক্ষের অন্তর্কোন্দল মেটাতে তিনি ইরাক ও ইরানের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করেন। সফরের মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার জিয়াউদ্দিন চৌধুরীকে বিষয়টি জানানো হয়। সাধারণত এ ধরনের সফরের কথা মাসখানেক আগে জানানো হলেও এই সফরটি ছিল ব্যতিক্রম। 

### ঘটনার বিবরণ 

১৯৮১ সালের ২৯ মে চট্টগ্রামে পৌঁছান জিয়াউর রহমান। সার্কিট হাউসে অবস্থানকালে তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনী এবং কিছু পুলিশ সদস্য। কিন্তু ভোর চারটার দিকে গোলাগুলির শব্দে সার্কিট হাউসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিপথগামী কিছু সেনাসদস্য সার্কিট হাউস আক্রমণ করে এবং রাষ্ট্রপতির কক্ষে প্রবেশ করে তাকে হত্যা করে। 

### প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ 

তৎকালীন চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী তার আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন কিভাবে সেনাসদস্যরা সার্কিট হাউসে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালায়। রাষ্ট্রপতির প্রটোকল অফিসারও ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, সেনাসদস্যরা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে ফেলে এবং রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে। 

হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া... 

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডে দেশের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। সার্কিট হাউসে হাজারো মানুষ জড়ো হয় রাষ্ট্রপতির মরদেহ একনজর দেখতে। তিনি ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং তার রাজনৈতিক দর্শন বহু বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয়। 

### পরবর্তী প্রভাব 

জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গভীর প্রভাব ফেলে। তার নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আজও দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে আছে। জিয়া হত্যা পরবর্তী সময়ে তার রাজনৈতিক দর্শন ও উদারনৈতিক পথ অনুসরণ করে বিএনপি বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে আজও বিতর্ক অব্যাহত আছে। তবে এটি নিশ্চিত যে, জিয়াউর রহমানের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গভীর ক্ষত হিসেবে বিদ্যমান থাকবে।

 

 

  লেখক- ইব্রাহিম খলিল

সংবাদকর্মী ও মানবাধিকার গবেষক

לא נמצאו הערות