close
ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!
রাজশাহীতে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব: চাঁদা না দিলে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলে মামলা ফাঁসানোর হুমকি


রাজশাহীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা চাঁদাবাজি, হেনস্তা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। কেউ তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলে মামলা কিংবা পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। এমনকি সরকারি দপ্তরেও দলবেঁধে গিয়ে চাঁদা দাবি করছে এইসব গ্যাংয়ের সদস্যরা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।
কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীসহ গোদাগাড়ী ও পবা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পট পরিবর্তনের পর নতুন করে সংগঠিত হয়েছে এইসব গ্যাং। কখনো রাজনৈতিক দলের কর্মী, আবার কখনো গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিচয়ে তারা ফোনে টাকা দাবি করছে। এমনকি ভোরবেলা লোকজনের বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ছে।
নয়নের অভিজ্ঞতা
সম্প্রতি নগরীর তেরখাদিয়া ডাবতলা এলাকায় চাঁদাবাজির শিকার হন প্রেমতলীর নয়ন মেম্বার। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে এবং তা না দিলে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে ৫০ হাজার টাকায় বিষয়টি রফাদফা করা হয়। নয়ন মেম্বার জানান, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই এবং এই কিশোররা নিজেদের একটি রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছিল।
বাইরে থেকে আসা পরিবার লক্ষ্যবস্তু
রাজশাহীতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে পড়াশোনা ও কাজের কারণে পরিবার নিয়ে এসে বসবাস করা লোকজন কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম টার্গেট। এমনই একজন ভুক্তভোগী শিক্ষক জানান, তেরখাদিয়া ও ডাবতলা এলাকায় এসব গ্যাং দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়। অপরিচিত কাউকে দেখলেই পুলিশের মতো আচরণ করে এবং টাকা না দিলে মামলা কিংবা গণপিটুনির ভয় দেখায়।
গোদাগাড়ীর কৃষকের হুমকি
গোদাগাড়ীর বিদিরপুর এলাকার এক কৃষক জানান, তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। তবুও তাকে বারবার ফোন করে টাকা দাবি করা হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে, ডিবি পুলিশ ডেকে তাকে জেলে পাঠানো হবে। একপর্যায়ে তিনি পুলিশের একজন কর্মকর্তার পরামর্শ নিলে ফোন বন্ধ রাখার উপদেশ পান। কিন্তু এরপরও একদল কিশোর রাতে তার বাড়ির দরজায় এসে টোকা দিয়ে গেছে।
ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা ভোগান্তিতে
রাজশাহী কোর্ট এলাকার ব্যবসায়ী সেতাবুর রহমান বলেন, ‘‘ব্যবসা চালাতে গিয়ে হঠাৎ দেখছি নতুন সমস্যা। কিশোররা দলবেঁধে এসে টাকা চাচ্ছে, কেউ বলছে তারা রাজনৈতিক নেতার লোক।’’
অপরদিকে, সদর উপজেলার এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, ‘‘দিনে-দুপুরে চার-পাঁচজন করে দলবেঁধে অফিসে এসে নানা দাবি জানায়। কখনো ভিজিডি কার্ডের জন্য চাপ দেয়, অথচ এসব তাদের দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।’’
পুলিশের বক্তব্য
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘‘ভুক্তভোগীদের উচিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানানো। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ চাইলে গোপনে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে পারেন।’’
শেষ কথা
রাজশাহীতে কিশোর গ্যাংয়ের এমন তাণ্ডবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, হুমকি এবং মাদকের টাকার জোগাড়ে এমন কর্মকাণ্ডের লাগাম টানতে এখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে সর্বমহলে।
Keine Kommentare gefunden