রাসিকের সচিব বকেয়া বিল ছাড় না দেওয়ায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সব উন্নয়ন কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা দিয়েছেন ঠিকাদাররা। ফলে ভেঙে পড়তে বসেছে শহরের চলমান সব প্রকল্প।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) চলমান সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে গেল অনির্দিষ্টকালের জন্য। বকেয়া বিল পরিশোধ না হওয়ায় বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই ঘোষণা দিয়েছেন ঠিকাদাররা। নগরীর সপুরা এলাকায় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে দাঁড়িয়ে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন।
ঠিকাদারদের দাবি, গত আড়াই মাস ধরে প্রায় ২৫০টি বিল সংক্রান্ত ফাইল সচিব রুমানা আফরোজের টেবিলে পড়ে রয়েছে। এতে অন্তত ১৫ জন ঠিকাদারের প্রাপ্য অর্থ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এত বিপুল অর্থ আটকে থাকায় তারা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে বাধ্য হয়ে সব ধরনের উন্নয়নকাজ স্থগিতের ঘোষণা দিতে হয়েছে।
ঠিকাদার রেজাউল করিম বলেন, “অনেকবার আমরা রাসিক সচিবকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। ২০ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেও আমরা বিল ছাড়ের আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের ডাকে সাড়া তো দেয়নি, উল্টো আলোচনা করতেও রাজি হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা সব কাজ বন্ধ করে দিলাম।”
ঠিকাদার সালাহউদ্দিন গাজী বলেন, “শহরে চারটি ফ্লাইওভার, ছয়টি কাঁচাবাজার এবং অনেক সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন কোনো বিল ছাড়ছে না। শ্রমিকেরা টাকা না পেয়ে আমাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। আমরা আর লুকাতে পারছি না। কাজ বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।
আরেক ঠিকাদার প্রকৌশলী শাকিলুর রহমান বলেন, “টাকা ছাড়া কোনো উন্নয়নকাজ সম্ভব নয়। রাস্তা খুঁড়ে রাখা অবস্থায় দুর্ঘটনা হচ্ছে। চারদিকে ধুলাবালি ও দূষণ। রাজশাহী শহর ‘গ্রিনসিটি’ হিসেবে যে পরিচিত, সেটা আর থাকবে কি না সন্দেহ। আগে ফ্যাসিস্ট আমলে অন্যায় দেখেছি, এখনও অন্যরকম ফ্যাসিবাদ চলছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা ঠিকাদাররা ভ্যালুলেস হয়ে গেছি। সচিবের কাছে গেলে পিয়নের চেয়ে আমাদের সম্মান কম। এমন অবস্থা চলতে পারে না। কয়েক হাজার পরিবারের ভরণপোষণ এই অর্থের উপর নির্ভরশীল।”
ঠিকাদার ইয়াহিয়া খান মিলু বলেন, “আড়াই মাস ধরে সচিব কোনো বিল ছাড়েননি। তাতে জনগণের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সচিব সময়মতো অফিসে আসেন না, অফিস করেন রাতে। তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলে কথিত আছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তিনি কি সরকারকে বিপাকে ফেলতে চান?”
ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিনিধি রাসেল ইসলাম সপুরায় নির্মাণকাজ বন্ধ ঘোষণা করেন। সাথে সাথে অন্য ঠিকাদাররাও তাদের নিজ নিজ প্রকল্পের কাজ বন্ধের ঘোষণা দেন। উপস্থিত ছিলেন হাফিজুল ইসলাম, বেলাল খানসহ আরও অনেকে।
নিউজটি জানার পর সাংবাদিকরা রাসিক সচিব রুমানা আফরোজের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। তবে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম ঠিকাদারদের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “২৫০টি ফাইল আটকে আছে – এটা আমার জানা নেই। বিল আটকে থাকলে ঠিকাদারেরা আমাকে জানাতে পারতেন। কেউ বলেননি।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী নগরীতে উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই এবং সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়বে – এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।