রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফের অস্থির হয়ে উঠেছে ছাত্ররাজনীতির উত্তপ্ত সংঘর্ষে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এতে অন্তত কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দুই পক্ষই।
মশাল মিছিল থেকে শুরু উত্তেজনার
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এটিএম আজহারুল ইসলামের দায়মুক্তি প্রদানের মাধ্যমে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। এই প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা মশাল মিছিলের আয়োজন করে। মিছিলটি রাত ৮টার দিকে পরিবহন মার্কেট এলাকা থেকে শুরু হয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
অন্যদিকে, ইসলামী ছাত্রশিবির ‘শাহবাগ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের ফাঁসির দাবি জানায়। শহীদ জোহা চত্বর থেকে মিছিল শুরু করে তারা পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে এবং পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে একটি সংক্ষিপ্ত পথসভা করে।
মুখোমুখি অবস্থান, এরপর সংঘর্ষ
দুই পক্ষের মিছিল যখন একই স্থানে এসে পৌঁছে, তখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি স্লোগান। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ একে অপরের দিকে চেয়ার ও মশাল নিক্ষেপ করে। শুরু হয় সংঘর্ষ, যা কয়েক মিনিট ধরে চলে এবং ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের অন্তত ৫-৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
‘শাহবাগ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “ছাত্রজোটের মশাল মিছিল আমাদের মিছিলে এসে পড়ে। তারা সরাসরি আমাদের উপর হামলা চালায়। মশাল দিয়ে আঘাত করায় আমাদের দুইজন আহত হয়েছেন। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
অন্যদিকে, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, “আমাদের কর্মসূচি ছিল সন্ধ্যা ৭টায়। কিন্তু শিবির হঠাৎ একই সময়ে মিছিলের ঘোষণা দেয়। তাই আমরা এক ঘণ্টা পরে কর্মসূচি শুরু করি, যাতে সংঘর্ষ না হয়। কিন্তু তারা দুইবার আমাদের উপর হামলা করে—একবার পরিবহন মার্কেট এলাকায় এবং পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে।”
প্রশাসনের পদক্ষেপ
ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর হয়। ছাত্র উপদেষ্টা কনক কুমার পাঠক বলেন, “সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই এবং উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে যেন আর কোনো সহিংসতা না ঘটে সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসন সকল ছাত্র সংগঠনকে শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ আবারও প্রমাণ করলো, ছাত্ররাজনীতিতে ভিন্নমতের সহাবস্থান কতটা জরুরি। মতবিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন কখনোই শিক্ষাঙ্গনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট না করে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে এই ঘটনার বিচার ও পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।