close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ‘টার্গেট’ করে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল সুব্রত বাইনের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রশিক্ষিত সাবেক ‘টার্গেট কিলার’ সুব্রত বাইন এখন বাংলাদেশে ফের অশান্তির খেলায়! টার্গেট রাজনীতিক, পরিকল্পনা চূড়ান্ত, যোগাযোগ রক্ষা করছে ‘র’–এর সাথেও! এই চাঞ্চল্যকর ফাঁস হওয়া তথ্..

বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন আবারও দেশের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তিনি একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছেন, যা কেবল রোমাঞ্চকরই নয়, বরং দেশের ভবিষ্যতের জন্যও ভয়ানক বার্তা বহন করছে।

জানা গেছে, সুব্রত বাইন শুধু একজন পলাতক সন্ত্রাসী ছিলেন না; বরং তিনি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (RAW)-এর কমান্ডো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ‘টার্গেট’ করে হত্যার মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরির সুপরিকল্পিত ছক ছিল তার এবং তার বাহিনীর। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেই এই ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা এসব স্বীকারোক্তির সত্যতা যাচাই করছেন।


RAW-এর হয়ে নেপাল-দুবাইয়ে ‘মিশন’, বাংলাদেশেও একাধিক গোপন অপারেশন!

সূত্র জানায়, ‘র’-এর হয়ে তিনি নেপাল ও দুবাইতে গোপন মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, যুক্তরাজ্যে থাকা একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে হত্যা করার টার্গেটও তাকে দিয়েছিল ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ কাজ সফল হলে সুব্রত ও তার পরিবারকে কানাডায় পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশে আয়নাঘরের ভেতরে অবস্থানকালেও সুব্রতকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে – মুভিং টার্গেট, বাতাসের গতি, দূরত্ব মাপার মতো সেনা ট্রেনিংয়ের মতো বিষয়েও স্নাইপার প্রশিক্ষণ চালানো হয়েছে। তাকে অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ফোন সরবরাহ করা হয়, যেটি পাঠানো হয়েছিল ‘র’-এর মাধ্যমে, সহযোগী মোল্লা মাসুদের মাধ্যমে।


২০০১ থেকে শুরু, পালিয়ে ভারতে; কলকাতায় বিলাসবহুল জীবন, এরপর চীন-দুবাই!

২০০১ সালে তৎকালীন সরকার যখন ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে, তখনই মোল্লা মাসুদকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায় সুব্রত বাইন। যশোরের বেজপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে পরিবারসহ থাকতো সে। কলকাতা পুলিশ একবার তাকে গ্রেফতার করলে, আরেক সন্ত্রাসী জয় তাকে ছাড়িয়ে নেয়। জয় ছিল ভারতীয় প্রশাসনে ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে ক্ষমতাধর।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এবং সেনা গোয়েন্দারা সুব্রত, মাসুদ এবং অপর সহযোগী মধু বাবুকে ভারতের উত্তর ও মধ্যপ্রদেশে বিভিন্ন স্থানে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেন।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আহ্বানে কলকাতায় সুব্রতকে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় ভারতের সিআইডি। এরপর সে আলী মোহাম্মদ নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে চীন পাড়ি জমায়, পরে যায় দুবাইয়ে। সেখানেও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বিলাসবহুল ভিলায় বসবাস শুরু করে।


দাউদ ইব্রাহিমের নেটওয়ার্কে ঢোকার চেষ্টা, ‘টাইগার মেমন’-এর সঙ্গে মিশনের ছক!

দুবাইয়ে অবস্থানকালে ভারতীয় মোস্ট ওয়ান্টেড টাইগার মেমনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সুব্রতকে। উদ্দেশ্য ছিল মাফিয়া কিং দাউদ ইব্রাহিমের চক্রে ঢোকা। যদিও এই মিশনে ব্যর্থ হয় সে। এরপর আবারও নেপাল হয়ে ভারতে প্রবেশ করে এবং কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে এসটিএফ (স্পেশাল টাস্ক ফোর্স) তাকে গ্রেফতার করে।


২০২৩: সিলেট সীমান্ত দিয়ে ‘বিশেষভাবে’ র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর!

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা এসটিএফ তাকে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে র‌্যাবের হাতে তুলে দেয়। এরপর র‌্যাব সদর দপ্তরে বিশেষ নিরাপত্তায় রাখা হয় সুব্রত বাইনকে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম তার সঙ্গে দেখা করেন এবং নতুন টার্গেট মিশনের নির্দেশনা দেন।

এই টার্গেট ছিল যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক রাজনৈতিক নেতা। তাকে লন্ডনে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল পাকিস্তানি পাসপোর্টে। বলা হয়, সফল মিশনের পর পুরো পরিবারকে আলী মোহাম্মদ নামে ভারতীয় পরিচয়ে কানাডায় পাঠানো হবে। এমনকি কূটনৈতিক সহায়তা পর্যন্ত প্রতিশ্রুত ছিল।


২০২৪: হাসিনা সরকারের পতনের পর মুক্তি, আবারও সক্রিয় সুব্রত!

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সুব্রত বাইনের মুক্তি ঘটে। এরপর থেকেই সে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠে। ‘র’-এর সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করে এবং স্যাটেলাইট ফোনসহ দেশে পাঠানো হয় মোল্লা মাসুদকে। তাদের সঙ্গে পলাতক আওয়ামী নেতাদের যোগাযোগ হয় নেপালে থাকা সন্ত্রাসী লেদার লিটনের মাধ্যমে।


নতুন অশনি সংকেত: তদন্ত চলছে, কিন্তু কী আসছে সামনে?

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন, সুব্রত ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। তবে যে স্তরের প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সংযোগের কথা সুব্রত বাইন স্বীকার করেছেন, তাতে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি, রাজনৈতিক নেতা হত্যার পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র – এই ত্রিমাত্রিক মিশ্রণে উঠে এসেছে এমন একটি চরিত্র, যাকে বহু বছর পরও ‘ভুলে যাওয়ার মতো’ নয়, বরং নজরদারিতে রাখার দরকার।

এই প্রতিবেদনটি গোয়েন্দা তথ্য, স্বীকারোক্তি এবং প্রকাশিত তদন্ত সূত্রের ভিত্তিতে প্রস্তুত। যেকোনো সংবেদনশীল তথ্য যাচাই না করে গ্রহণ না করার অনুরোধ রইল। নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার উপর আস্থা রাখুন।

Nessun commento trovato