close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

রাজনীতিতে চাপা উত্তেজনা, গুমোট পরিস্থিতি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঢাকা রাজনীতিতে ফের গুমোট অবস্থা। সেনাপ্রধানের নির্বাচন মন্তব্য, ইশরাক ইস্যুতে আন্দোলন, এনসিপি-বিএনপি দ্বন্দ্ব, ও জামায়াত-তথ্য উপদেষ্টার ঐক্যের ডাক—সব মিলে ধীরে ধীরে বিস্ফোরণের দিকে এগোচ্ছে দেশের রাজনী..

বাংলাদেশের রাজনীতি যেনো এক চুল পরিমাণে বিস্ফোরণের আগের স্তরে দাঁড়িয়ে। গেলো কয়েক দিন ধরে রাজনীতির অঙ্গনে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ চাপা উত্তেজনা ও গুমোট পরিস্থিতি। এর পেছনে অন্যতম কারণ সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য। সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। এই বক্তব্যের পর থেকেই রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ঘটতে শুরু করে নাটকীয় পালাবদল।

এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা নগরভবনের সামনে বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষোভে বসে পড়ে। তারা ঘোষণা দেন, ইশরাকের ন্যায্য দায়িত্ব বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।

এই বিক্ষোভে নতুন মাত্রা যোগ করে কাকরাইল মোড়ে ইশরাকের কর্মী-সমর্থকদের টানা অবস্থান। বিষয়টি এতটাই গুরুতর হয়ে ওঠে যে, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একের পর এক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। আন্দোলনের মধ্যে দাবি ওঠে দলের দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগেরও।

এই উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগের ফান্ডিং বন্ধ হলেও, তাদের অর্থব্যবস্থা এখনো বহাল। এমনকি বিএনপির রাজনীতিও নাকি চলে সেই টাকাতেই।”

এই বক্তব্যে আগুনে ঘি ঢেলে দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি সরাসরি বলেন, “ছয় বছর জেলে থেকে তুমি কোথায় ছিলে? আমাদের দল চলে আওয়ামী লীগের টাকায়—এমন কথা বললে, বাংলার মানুষ তোমায় বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবে।”

রাজনৈতিক ঐক্য ভেঙে গেছে আগেই: উমামা ফাতেমা

এ সময় একাধিক বিরোধী দলের মধ্যকার ঐক্য ভেঙে যাওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। বিএনপির নেত্রী উমামা ফাতেমা স্পষ্ট করে বলেন, “গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই বিরোধী দলগুলোর ঐক্য ভেঙে গেছে। এখন একেক দল একেক পথে।”

ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে ঐক্যের ডাক

পরিস্থিতি যখন চরমে, তখনই তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে অতীতের বিভাজনমূলক বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা অতীতে অনেক ভুল করেছি। এখন সময় বৃহত্তর ঐক্যের।” একইসাথে তিনি সবাইকে আহ্বান জানান “জুলাইয়ের স্পিরিট” ফিরিয়ে আনার জন্য।

জামায়াতের আমীরও একই সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমাদের মান-অভিমান ভুলে এখন ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। সময় খুব সীমিত। এখন দায়িত্বশীল আচরণের বিকল্প নেই।”

আদালতের রায়ে হুইসেল ব্লো

বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত ইশরাকের পক্ষে রায় দিলে, বিকেলেই তিনি রাজপথ ছাড়ার ঘোষণা দেন এবং ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন।

কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এই রাজনৈতিক উত্তাপ?

এখন সকলের নজর একটাই—এই চাপা গুমোট রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে? ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি দল নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টায়। কিন্তু এর মাঝেই সরকার, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এবং অন্যান্য দলগুলো যেভাবে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে, তা দেশবাসীকে এক ভয়াবহ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সামনে দাঁড় করিয়েছে।

এই পরিস্থিতির মোড় কোন দিকে ঘুরবে তা এখনো অজানা। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আগামী কয়েক সপ্তাহেই বাংলাদেশ রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

No comments found