close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে সৈনিকের র'হ'স্য'ম'য় আ'ত্ম'হ'ত্যা: গলায় ফাঁ'স..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে সৈনিক সৌরভ হোসেনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পাশে পাওয়া গেছে একটি চিরকুট, যেখানে তিনি আত্মহত্যার কারণ লিখে গেছেন। অনলাইন বেটিংয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া, অপমান ও নজরবন্দির মতো ..

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। সৈনিক এসএম সৌরভ হোসেনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর সময় তার পরনে ছিল পূর্ণ ইউনিফর্ম ও সেনা বুট, আর পাশে পাওয়া গেছে একটি চিরকুট—যা আরও রহস্য ঘনীভূত করেছে।

ঘটনাটি ঘটে গত রোববার ভোরে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানিয়েছে, এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সৌরভ রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের ওয়ার্কশপ ভবনের এক ব্যারাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ফাঁস দেন। তার মরদেহ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।

সৈনিক সৌরভ হোসেন ছিলেন ঝিনাইদহ জেলার গাড়াগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উজির আলী মোল্লার ছেলে এবং তার পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি সৌরভ বগুড়া সেনানিবাস থেকে বদলি হয়ে রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে যোগ দেন। সেখানে তিনি এমপি (এপিসি) স্কট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে বদলির পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অনলাইন জুয়ার আসক্তি।

সূত্র জানায়, ঘটনার দিন ভোরে গোপনে সহকর্মী ল্যান্স করপোরাল ইয়াসির আরাফাতের মোবাইল ব্যবহার করে একটি বেটিং সাইটে ১৪ হাজার টাকা জমা দেন সৌরভ। পরে মোবাইল চার্জার পয়েন্টে রাখতে গেলে ইয়াসির আরাফাত ঘটনাটি টের পান এবং তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সৌরভকে শাস্তিস্বরূপ নজরবন্দি রাখা হয়।

ওসি হালিম জানান, ওইদিন ভোরে সৌরভ ওয়াশরুমে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে পাহারাদারের সঙ্গে বের হন। দীর্ঘ সময় ফিরে না আসায় প্রহরী তাকে খুঁজতে গিয়ে ওয়াশরুমে না পেয়ে সন্দেহ করে। একপর্যায়ে দেখা যায়, ওয়াশরুমের সানশেড জানালা খোলা। সেই জানালা দিয়ে সৈনিক সৌরভ তিনতলার এক পাশের কনস্ট্রাকশন সাইটের বাঁশের সঙ্গে গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন।

তবে ঘটনাটিকে নিছক আত্মহত্যা হিসেবে না দেখে আরও গভীরভাবে তদন্তের দাবি উঠেছে। কারণ মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে সৌরভ আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। চিরকুটে তিনি নিজের ভুলের কথা স্বীকার করেছেন এবং অনলাইন জুয়া ও সহকর্মীর কাছে অপমানিত হওয়ার ঘটনাকেই আত্মহননের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই মর্মান্তিক ঘটনা সৈনিকদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সেনানিবাসে শৃঙ্খলা ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলেছে। কীভাবে একজন সেনা সদস্য সহকর্মীর মোবাইল ব্যবহার করে বেটিং সাইটে লগইন করতে পারলো, নজরদারির মাঝেও আত্মহত্যার সুযোগ পেল—এসব নিয়েই এখন আলোচনা শুরু হয়েছে।

সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ তদন্তও শুরু হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি পুলিশও আলাদা তদন্ত চালাচ্ছে।সৈনিক সৌরভ হোসেনের মৃত্যু শুধুই একটি আত্মহত্যা, নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও কোনো গভীর সংকট? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সময় লাগবে, তবে এটি স্পষ্ট—মানসিক চাপ ও প্রযুক্তির অপব্যবহার একসাথে মিলে একজন মানুষের জীবনের আলো নিভিয়ে দিতে পারে।

Hiçbir yorum bulunamadı


News Card Generator