মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে মস্কো ও তেহরানের মধ্যে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিন প্রাসাদে স্বাগত জানালেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচিকে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুতিন জানিয়ে দিলেন—রাশিয়া ইরানি জনগণের পাশে থাকবে এবং প্রয়োজনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
এই বৈঠকটি মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমান অস্থিরতা ও আঞ্চলিক সংঘাতের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল নিয়মিতভাবে ইরান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ২২ জুন, যখন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট হামলা চালায়।
আলোচনার শুরুতেই প্রেসিডেন্ট পুতিন আরাঘচিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,প্রিয় মন্ত্রী, আপনাকে দেখে আমি খুবই আনন্দিত। আপনি এমন এক নাটকীয় সময়ে রাশিয়া সফরে এসেছেন, যখন আপনার দেশ এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি গুরুতর।
তিনি স্পষ্ট করে জানান, ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বহুদিনের এবং গভীর। সেই সম্পর্ককে আরও জোরদার করা এবং ইরানকে আন্তর্জাতিক মহলে সমর্থন দেওয়াই এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য।আমরা ইরানি জনগণকে সহায়তা প্রদানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিনা উস্কানিতে ইরানের উপর হামলা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য," বলেন পুতিন।
তিনি আরও যোগ করেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে মস্কোর অবস্থান পরিষ্কার। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে এবং জানিয়ে দিয়েছে—ইরানের ওপর চলমান হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
বৈঠকে আব্বাস আরাঘচি বলেন,ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত আগ্রাসনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে। ইরান এই কর্মকাণ্ডকে সম্পূর্ণ অবৈধ মনে করে এবং আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার রাখে।
তিনি রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,ইরানের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা রাশিয়াকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে রাশিয়া এখন সঠিক দিকে দাঁড়িয়ে আছে।
এছাড়াও, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের পক্ষ থেকে পুতিনকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক শুধু ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়—বরং এটি ভবিষ্যতে একটি বৃহৎ ভূরাজনৈতিক জোট গঠনের সংকেত হতে পারে। পশ্চিমা প্রভাবিত আন্তর্জাতিক নীতিমালার বিপরীতে চীন, রাশিয়া ও ইরান একত্রে একটি শক্তিশালী কণ্ঠ তৈরি করছে।
রাশিয়া-ইরান একাত্মতা শুধুই কূটনৈতিক নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে শক্তি, নিরাপত্তা ও সামরিক সহায়তার ইঙ্গিতও। বিশেষ করে যখন পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে—তখন এমন সহযোগিতা ইরানের জন্য রীতিমতো জীবনরক্ষাকারী হতে পারে।
পুতিনের বার্তা স্পষ্ট: ইরান একা নয়, রাশিয়া তাদের পেছনে আছে।
এটা শুধু একান্ত কূটনৈতিক সৌজন্য নয়—বরং একটি শক্তিশালী বার্তা বিশ্বের সেই শক্তিগুলোর উদ্দেশ্যে যারা ইরানকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে এই বৈঠক যেমন শান্তির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, তেমনই বড় সংঘাতের পূর্বাভাসও দিতে পারে।