close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

পুরনো বন্ধুত্বের নস্টালজিয়া মিলনমেলা এক বিকেলে ফিরে দেখা এক দশকের স্মৃতি..

Towfiq Sultan avatar   
Towfiq Sultan
পুরনো বন্ধুত্বের নস্টালজিয়া মিলনমেলা এক বিকেলে ফিরে দেখা এক দশকের স্মৃতি
সময় কখনও থামে না, কিন্তু কিছু মুহূর্ত এমন থাকে যা বছরের পর বছর পরও ঠিক ততটাই উজ্জ্বল, যতটা ছিল শুরুতে। স্কুলজীবনের বন্ধুত্ব..

পুরনো বন্ধুত্বের নস্টালজিয়া এক বিকেলে ফিরে দেখা এক দশকের স্মৃতি

তৌফিক সুলতান
 প্রভাষক, ব্রেভ জুবিলেন্ট স্কলার্স অফ মনোহরদী মডেল কলেজ
 (বি জে এস এম মডেল কলেজ) মনোহরদী, নরসিংদী

সময় নদীর স্রোতের মতো বয়ে চলে, কারও জন্য থেমে থাকে না। কিন্তু জীবনের কিছু মুহূর্ত এমন থাকে, যা বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিক আগের দিনের মতোই সতেজ ও উজ্জ্বল হয়ে থাকে। স্কুলজীবনের বন্ধুত্ব এমনই এক অমূল্য সম্পদ, যা বয়স, পেশা কিংবা দূরত্বের প্রাচীরেও ভাঙে না। এই সত্যেরই জীবন্ত প্রমাণ হয়ে রইল মনোহরদীর এক বর্ষণসিক্ত বিকেল, যেখানে ২০১৫ সালের এসএসসি ব্যাচের ছয় বন্ধু—আশিক, তামিম, রাকিব, সোহান, তানভীর ও লেখক নিজে—দীর্ঘ দশ বছর পর আবারও একত্র হলেন।

 

অপ্রত্যাশিত আমন্ত্রণ ও ব্যস্ততার ভাঙন

সেদিনের সকালটা ছিল একেবারে সাধারণ। নিত্যদিনের মতো লেখক ব্যস্ত ছিলেন নিজের কাজকর্মে। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে—ওপাশে বন্ধু তানভীরের কণ্ঠ, যেন অনেক দিনের পুরনো সুর। খবর পেলাম, তারা মনোহরদী আসছে। তানভীর শুধু একজন বন্ধু নন, বরং জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফোন রাখার আগেই মনে হলো, দিনের সব কাজ থামিয়ে দিতে হবে—কারণ, এমন প্রিয় মুখগুলো দেখা যায় না প্রতিদিন।

 

ভিন্ন পথে হাঁটা, কিন্তু হৃদয়ের সেতু অটুট

২০১৫ সালে এসএসসি শেষ হওয়ার পর ছয় বন্ধু ছড়িয়ে পড়ে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আশিক, তামিম, সোহান ও তানভীর ভর্তি হয় নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজে। রাকিব ভর্তি হয় একটি প্রাইভেট কলেজে, আর লেখক ভর্তি হন এম এ মজিদ সায়েন্স কলেজে। কলেজজীবনে সরাসরি দেখা কম হলেও ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া আর উৎসবের দিনগুলোতে যোগাযোগ ছিল অব্যাহত। বন্ধুত্বের বীজ মাটির নিচে থাকলেও শিকড়ের মতো দৃঢ় ছিল।

 

স্মৃতির ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়া

মিলনমেলার জন্য বেছে নেওয়া হলো এম এ মজিদ সায়েন্স কলেজের প্রাঙ্গণ—লেখকের নিজের কলেজ, যার প্রতিটি কোণায় রয়েছে তারুণ্যের হাসি-কান্নার স্মৃতি। লাল-সাদা ভবনের দেয়াল, বিশাল খেলার মাঠ, গাছের সারি—সবই যেন অতীতের গল্প বলছিল। একসাথে দাঁড়িয়ে তারা তুললেন অনেক ছবি, যা হয়তো একদিন এই দিনের সবচেয়ে উজ্জ্বল স্মারক হয়ে থাকবে।

 

আড্ডা, স্মৃতিচারণ ও হাসির বন্যা

আড্ডার শুরুতেই যেন খোলা হলো স্মৃতির দরজা।

স্কুল জীবনের দুষ্টুমি,

 

 

ভূগোল পরীক্ষায় পাস নম্বর পাওয়া নিয়ে ঠাট্টা,

 

 

ক্যানটিনের চা-সমোসার স্বাদ,

 

 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চে ওঠার ভয়—

 সবই ফিরে এল অঝোর হাসি ও আবেগের মিশ্রণে।

 কেউ বললেন হোস্টেল জীবনের রাত জাগা গল্প, কেউ আবার পড়াশোনার চেয়ে আড্ডায় বেশি সময় কাটানোর স্বীকারোক্তি করলেন। শিক্ষকদের মজার ঘটনা, হারিয়ে যাওয়া চিঠি, এমনকি প্রথম প্রেমের গল্পও বাদ গেল না।

 

 

 

বর্তমান জীবন ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন

আজ ছয় বন্ধুর জীবন ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে। কেউ শিক্ষক হয়ে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন, কেউ ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা দিচ্ছেন, কেউ আবার বিসিএস-এর স্বপ্নে ছুটছেন। ব্যস্ততা, দায়িত্ব, আর জীবনের প্রতিযোগিতার মাঝেও তারা এই দিনের জন্য সময় বের করেছেন—কারণ এই মিলনমেলা তাদের কাছে শুধু আনন্দ নয়, বরং মানসিক পুনর্জাগরণের মুহূর্ত।

 

মনোহরদীর পথে পথে

আড্ডার মাঝেই সিদ্ধান্ত হলো, আশেপাশের কিছু প্রিয় জায়গা ঘুরে দেখা হবে। মোটরসাইকেলে তারা ছুটলেন হাতিরদিয়া, ছোট সুকুন্ধী—গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা স্থানগুলোতে। স্মৃতির পাতায় যোগ হলো নতুন কিছু ছবি, নতুন কিছু গল্প। এর আগে তারা কাপাসিয়ার জনপ্রিয় আড্ডাস্থল ক্যাফে শীতল হাওয়া ও পাশের গোল্ডেন ক্যাফেতেও গিয়েছিলেন, যা এই বন্ধুত্বের ভ্রমণপঞ্জিতে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।

 

বৃষ্টির ছোঁয়ায় অতীতে ফেরা

বিকেলের শেষে যখন কলেজে ফেরত এলেন, তখন শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। মাঠের ঘাস, গাছের পাতা আর কলেজ ভবনের ছাদে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ যেন সঙ্গে নিয়ে এলো অতীতের সুর। স্মৃতিচারণের আরেক রাউন্ড শুরু হলো—পরীক্ষার আগে রাত জাগা, ফলাফলের টেনশন, ‘আগে যদি আরও মনোযোগী হতাম’ ধরনের আক্ষেপ, আর সেইসাথে হাসি-কান্নার ভাগাভাগি।

 

এক বিকেলের শিক্ষা

এই মিলনমেলা শিখিয়ে দিল—বন্ধুত্ব শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং জীবনের কঠিন পথে একে অপরকে অনুপ্রাণিত করারও উৎস। সাফল্যের গর্ব, স্বপ্নের আলো, আর অতীতের মধুর স্মৃতি—সব মিলিয়ে এই বিকেল হয়ে রইল জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।

 

সময়ের ফ্রেমে বন্দি মুহূর্ত

সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলে পড়ছিল, সোনালি আভা মেঘের ফাঁকে খেলছিল, ছয় বন্ধু তখন কলেজের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। হাতে ক্যামেরা, চোখে আনন্দের ঝিলিক। তারা জানে—সময় বদলাবে, জীবন এগোবে, কিন্তু মনোহরদীর সেই বৃষ্টিভেজা বিকেল চিরকাল থেকে যাবে তাদের হৃদয়ে—যেন প্রিয় এক বইয়ের পৃষ্ঠা, যা বারবার পড়তে ইচ্ছে করবে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator