close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
পুলিশের গুলি ব্যবহারে কড়াকড়ি, বলপ্রয়োগের পাঁচ দফা সুপারিশ পুলিশের সংস্কার কমিশনের!


ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, বিক্ষোভ দমনে গুলি ব্যবহারের নীতিমালা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে, পুলিশের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে। এরই মধ্যে পুলিশের বলপ্রয়োগ সীমিত করতে এবং গুলি ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপে পাঁচটি ধাপে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কী বলছে?
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগের পাঁচটি ধাপ অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। এই ধাপগুলো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা ও ১৯৪৩ সালের পুলিশ প্রবিধানের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত একটি পুলিশ কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, কমিশনের কাঠামো কেমন হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। পুলিশ বিভাগ থেকে ১১ সদস্যের কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও সংস্কার কমিশন এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
গত বছরের আন্দোলনে প্রাণহানি ও পুলিশের ভূমিকা
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্যে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আহতের সংখ্যা ১১,৫৫১ এবং নিহত হয়েছেন ৮২৬ জন। মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মৃত্যুর ৭০ শতাংশই গুলির কারণে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্তত তিন ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
গুলির ব্যবহার সীমিত করতে পাঁচটি ধাপ
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ যদি উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই পাঁচটি ধাপে বলপ্রয়োগ করতে হবে।
১. সংস্পর্শহীন প্রতিরোধ - অবৈধ জনতাকে বাধা প্রদান করা হবে, যাতে তারা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ না করে।
2. নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা - জনতাকে সরানোর জন্য পুলিশ কৌশলগতভাবে অবস্থান নেবে।
3. কৌশলগত বলপ্রয়োগ - পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট কৌশল প্রয়োগ করা হবে।
4. স্বল্পমাত্রার অস্ত্র ব্যবহার - ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
5. দলগত অস্ত্র ব্যবহার - শুধুমাত্র চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে গুলি চালানো যাবে। তবে, সেটিও সীমিত পরিসরে হবে।
সহিংসতা প্রতিরোধে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে যে, পুলিশের দায়িত্ব হবে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা। মিছিল বা সমাবেশ অবৈধ হলে, জনতাকে দ্রুত ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ কৌশলগত উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। পুলিশের প্রথম দায়িত্ব হবে জনতার উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তারা সংঘর্ষ এড়ায়।
বিকল্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা
যদি জনতা মারমুখী আচরণ করে, পুলিশের প্রতি আক্রমণ চালায় বা সম্পদের ক্ষতি করে, তখন পুলিশ ধাপে ধাপে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এতে ব্যবহার করা হতে পারে:
গ্যাস স্প্রে
সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড
জলকামান
গ্যাস বা স্মোক ক্যানিস্টার
পেপার স্প্রে
শটগান
ইলেকট্রিক পিস্তল
তবে, কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র পুলিশ সদস্যদের আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য গুলি চালানো যাবে। পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অধিকারও সীমাবদ্ধ থাকবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সংস্কার কমিশনের সদস্য জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলপ্রয়োগের ঘটনায় অসংখ্য মানুষ শহীদ হয়েছেন। আমরা চাই না ভবিষ্যতে এমন ঘটনা পুনরায় ঘটুক। তাই পুলিশের নীতিমালায় সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি।’
এছাড়া, পুলিশ সংস্কার কমিশন স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করেছে। তবে সেটির কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
کوئی تبصرہ نہیں ملا