close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

পশ্চিমারা যে চোরাবালি থেকে ওঠার চেষ্টা করছে, আমরা সেই চোরাবালিতে ডোবার চেষ্টা করছি। ..

shahadat hossain Munsy avatar   
shahadat hossain Munsy
আমরা একাধিক সন্তান নেয়া ও পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মাওলানা আহমদ উল্যাহ।..

পশ্চিমারা যে চোরাবালি থেকে ওঠার চেষ্টা করছে, আমরা সেই চোরাবালিতে ডোবার চেষ্টা করছি। 

সম্প্রতি ডোনাল্ট ট্রাম্পের ছয় সন্তানের মাকে জাতীয় মেডেল দেয়ার ঘোষণায় বিষয়টি নতুন করে ভাবিত করল।

সন্তান মহান আল্লাহর তরফ থেকে পাওয়া সবচেয়ে হৃদয় শীতলকারী এক আশ্চর্য নেয়ামত। পশ্চিমারা এই নেয়ামতের পথ রুদ্ধ করে এখন তিল তিল করে মরছে। তাদের অর্থনীতি, জনশক্তি, মূল্যবোধ, জনসংখ্যার ভারসাম্য, এমনকি অস্তিত্ব মহাঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

কৃত ভুল থেকে উত্তরণের জন্য তারা সন্তান জন্মে নানা রকম লোভনীয় প্রণোদনা দিচ্ছে। আর আমরা স্লোগান দিচ্ছি ঠিক তার উল্টোটা : দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়। 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জন্মহার বৃদ্ধির জন্য কী ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে, আসুন একটু দেখা যাক।

১. জাপান : জাপানের নাগি শহরে প্রথম সন্তানের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ ইয়েন, দ্বিতীয় সন্তানের জন্য ১ লাখ ৯০ হাজার ২৩৭ ইয়েন, তৃতীয় ও চতুর্থ সন্তানের জন্য দেওয়া হয় ৫ লাখ ১ হাজার ৩১৫ ইয়েন।

২. রাশিয়া : রাশিয়ায় মাতৃত্ব ভাতা প্রোগ্রামের আওতায় প্রথম সন্তানের জন্য ৬৯০,০০০ রুবল (প্রায় ৮,২৯৫ মার্কিন ডলার) এবং দ্বিতীয় সন্তানের জন্য অতিরিক্ত ২২১,৮৯৫ রুবল (প্রায় ২,৬৬৮ মার্কিন ডলার) প্রদান করা হয়।

৩. জার্মানি : বর্তমান জার্মানিতে প্রণোদনা হিসেবে সন্তান প্রতি মাসিক ২৫০ ইউরো প্রদান করা হয়। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এটা চালু থাকে। আর সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত এই প্রণোদনা দেয়া হয়।

৪. চিন : ১৯৭৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চিন এক সন্তান নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। ২০১৬ সালে দুই সন্তান নীতি, ২০২১ সালে তিনটি সন্তান ধারণের অনুমতি দেয়। ২৬ জুলাই, ২০২১ জন্মগত সকল বিধিনিষেধ তারা প্রত্যাহার করে নেয়। 

৫. দক্ষিণ কোরিয়া : জন্মহার বাড়াতে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ৬.৭ ট্রিলিয়ন ওন আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ঘোষাণা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল সিটি গভর্নমেন্ট।

৬. ফ্রান্স : ফ্রান্সে কোনো নারী গর্ভবতী হলে সন্তান জন্মের আগেই ১ হাজার ইউরো দেয়া হয়। প্রথম সন্তানের জন্য মাসিক ১৯৩ ইউরো, এভাবে তিন সন্তান জন্ম নিলে প্রত্যেকের জন্য ১৯৩ ইউরো এবং মাকে দেওয়া হয় মাসে ১৪০০ ইউরো। সন্তানের আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত এটা চালু থাকে।  

৭. যুক্তরাষ্ট্র : সম্প্রতি ডোনাল্ট ট্রাম্প ছয় বা তার বেশি সন্তানের মায়েদের জন্য জাতীয় মেডেলের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া প্রত্যেক নতুন মায়ের জন্য এককালীন ৫ হাজার ডলার অর্থ সহায়তার প্রস্তাব রেখেছেন তিনি।

এভাবে ইতালি, পোল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, রোমানিয়া সহ আরো অনেক দেশের উদাহরণ টানা যাবে, যেসব দেশের সরকার জন্মহার বৃদ্ধির জন্য মরিয়া হয়ে লড়ছে। কিন্তু জনগণ সরকারের লোভনীয় অফারে কর্ণপাত করছে না। ফলে জন্মহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

এমনকি জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অনেক দেশ বাইরে থেকে রিফিউজি এনে বসবাসের ব্যবস্থা করছে।

সমতার নামে পুরুষের সাথে নারীকে উপার্জনে বাধ্য করা, স্বেচ্ছাচারিতা, বিবাহবহির্ভূত অবাধ যৌনাচার, দুর্লভ বৈবাহিক সম্পর্ক এবং ভঙ্গুর পরিবার ব্যবস্থা জন্মহার কমার প্রধান কারণ। 

পরিবারের যে সোনালি সিঁড়ি বেয়ে একটি শিশু পৃথিবীর মুখ দেখবে, সেই পরিবারই যদি না থাকে, তবে লাখ টাকার পুরস্কার কীভাবে জন্মহার বৃদ্ধি করবে!

কথিত সভ্য পৃথিবীর জন্য এ এক অভিশাপ। দুঃখের বিষয় হলো, পশ্চিমারা যে অভিশাপ থেকে বেঁচে ফেরার চেষ্টা করছে, আমরা সেই অভিশপ্ত জীবনের পথে হাঁটতে শুরু করেছি।

দিনকে দিন আমাদের সমাজে বিবাহকে কঠিন আর ব্যভিচারকে সহজ করা হচ্ছে। আর এটা ধ্রুব সত্য যে, কোনো জনপদে বিবাহের পথ কঠিন হলে সেখানকার জন্মহার কমে যায়। আমাদের সমাজেও এর মরণছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। 

শত অপ্রাপ্তির মাঝেও আমাদের মজবুত পারিবারিক বন্ধন পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম এবং দুর্দান্ত দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। কিন্তু প্রগতি ও নারীমুক্তির ‘মোহনীয়’ বিভ্রমে সেই সোনালি ঐতিহ্য আজ আমরা হারাতে বসেছি।  

পতঙ্গের যখন মৃত্যু ঘনিয়ে আসে, তারা ভয়ংকর আগুনকে ভাবে পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদ ভেবে তারা আগুনের ভেতর আত্মাহুতি দেয়। 

এদেশের এক শ্রেণির মানুষ পশ্চিমাদের নষ্ট কৃষ্টিকে চাঁদের আলো ভেবে ভুল করছে। আদতে তা এক ভয়ংকর আগুন। আলো ভেবে সেই ভয়ংকর আগুনকে আমরা যত কাছে টানছি, পতঙ্গের মতো মৃত্যু আমাদের তত নিকটবর্তী হচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকলে সেই ভয়ংকর আগুনে একদিন আমরা পুরোপুরি ভস্ম হয়ে যাব। শত আফসোস করেও সেদিন উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

Geen reacties gevonden