পশ্চিম তীরের তুলকারেম শরণার্থী ক্যাম্পে ১০০টিরও বেশি ফিলিস্তিনি আবাসিক ভবন ভাঙতে শুরু করেছে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৭ হাজার।
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরের তুলকারেম শরণার্থী ক্যাম্পের ভেতরে নতুন করে দখল ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে শুরু করেছে। আল-মুরাব্বা'আ নামক এলাকায় ১০০টিরও বেশি আবাসিক ভবন ধ্বংসের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি বুলডোজার।
সোমবার (৭ জুলাই) এক লাইভ প্রতিবেদনে আল জাজিরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুলকারেম ক্যাম্পের পপুলার কমিটি জানিয়েছে—ইসরায়েলি বাহিনী বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছে এবং আরও বহু বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া চলছে।
অপরদিকে, মানবাধিকার সংস্থা ‘আদালাহ’ জানায়, ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট প্রথমে ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে অস্থায়ী আদেশ দিলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক প্রয়োজনে’ অভিযানের অনুমতি দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক অনুমোদনে পরিচালিত দখলদারির বৈধীকরণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ফিলিস্তিনিদের মতে, এই ধ্বংসযজ্ঞ একটি বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ, যার মাধ্যমে পশ্চিম তীরের আরব জনগণকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে অঞ্চলটিকে পুরোপুরি ইহুদি বসতিতে পরিণত করতে চায় ইসরায়েল। সম্প্রতি পশ্চিম তীরজুড়ে যেসব অভিযান চালানো হচ্ছে, তা সেই পরিকল্পনারই বাস্তবায়ন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই একই দিনে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ভয়াবহ চিত্র আরও প্রকট হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩৫৬ জন।
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর ১৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল কমপক্ষে ৬ হাজার ৯৬৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন আরও ২৪ হাজার ৫৭৬ জন।
আর ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৫২৩ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬১৭ জনেরও বেশি। বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় চালানো এই অভিযানকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল দুইটি ফ্রন্টেই—গাজা ও পশ্চিম তীরে—একসঙ্গে হামলা চালিয়ে অঞ্চলটিকে ভয়াবহভাবে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এর ফলে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকা প্রতিদিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে।