close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

প্রশাসন কার পক্ষে? নাহিদ-রিজভীর মুখোমুখি অবস্থান জ্বালিয়ে দিল নতুন বিতর্ক..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রশাসনকে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক লড়াই। এনসিপি দাবি করেছে প্রশাসন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে, আর বিএনপি পাল্টা অভিযোগ তুলেছে—প্রশাসন বরং বৈষম্যবিরোধীদের ঘনিষ্ঠ! কে সঠিক,..

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার পারদ যেন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রশাসন কার পক্ষে—এই প্রশ্ন ঘিরে এবার মুখোমুখি হলো দুই বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

সম্প্রতি ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দাবি করেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসন এখন বিএনপির পক্ষ নিয়ে কাজ করছে। তাঁর ভাষায়, “এই ধরনের প্রশাসনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”

নাহিদ ইসলামের এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে টক শো পর্যন্ত শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ঠিক এমন সময়েই বিএনপি পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানায়, নাহিদ ইসলামের বক্তব্য আসলে ‘রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর’ বা ‘পলিটিক্যাল রেটরিক’।

বিএনপির জবাব: সখ্যতা আসলে কার সঙ্গে?

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে “জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা” বলে উল্লেখ করেন। তাঁর ভাষ্য, “প্রশাসনের সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে যারা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী বলে দাবি করে—তারাই আসলে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ।”

রিজভী বলেন, “যে দেশে যে সরকার থাকে, প্রশাসন তার নামে চলে—এই বাস্তবতা সবাই জানে। আমেরিকায় যেমন ছিল ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, তেমনি বাংলাদেশে এখন চলছে ইউনূস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।” তাঁর মতে, ছাত্রদের এবং এনসিপির প্রতিনিধিদের প্রশাসনের সঙ্গে রয়েছে সরাসরি সম্পর্ক ও প্রভাব।

এমনকি সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানও নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “যেহেতু নাহিদ এখন আর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নন, তাই তিনি এখন এমন মন্তব্য করতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।” তাঁর মতে, যদি প্রশাসন বিএনপির প্রভাবাধীন হয়ে থাকে, তার দায় বর্তমান সরকারেরই, কারণ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ তো তারাই করছে—চাকরির পদোন্নতি থেকে শুরু করে বদলি পর্যন্ত।

এনসিপির অবস্থান: প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও পক্ষপাতিত্ব

এদিকে এনসিপির পক্ষ থেকে বক্তব্য দিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব দাবি করেন, “বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র বরাবরই তাদের আশ্রয়দাতার দিকেই ঝুঁকে পড়ে। এতদিন আওয়ামী লীগ ছিল, তাই তারা তাদের হয়ে কাজ করেছে। এখন সম্ভাব্য পরবর্তী সরকার হিসেবে বিএনপিকে দেখেই আমলারা ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইতোমধ্যে প্রশাসন দেখছে যে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে তাদের সুবিধা থাকতে পারে। তাই তারা এখন থেকেই দর কষাকষি শুরু করেছে। মাঠ পর্যায়ে বিএনপিপন্থীদের চাঁদাবাজি চলছে, প্রশাসন নীরব দর্শক। নির্বাচন কমিশনও বিএনপির প্রস্তাবিত ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেছে—তাই এটি একতরফা হয়ে যাচ্ছে।”

আরিফুল ইসলাম মনে করেন, নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন পর্যন্ত বিএনপির প্রতি ‘নরম’ হয়ে উঠছে। তাঁর দাবি, “থানা পর্যায়ে পুলিশও বিএনপির পক্ষ নিচ্ছে। এটা কোনোভাবেই নিরপেক্ষতার ইঙ্গিত নয়।”

নির্বাচনের আগে অবস্থান স্পষ্ট করছে দলগুলো

নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “মৌলিক সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। আমরা এখনও ভাবছি, আদৌ এমন নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে কিনা।”

অন্যদিকে বিএনপি বলছে, তারা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। ফলে দুই দলের মধ্যে ভিন্নমতের গভীরতা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

সাবেক উপদেষ্টাদের ভূমিকা ও সরকারের অবস্থান

সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এই মন্তব্যের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকারের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য না আসলেও, দুজন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা বিবৃতি দিতে রাজি হননি।

শেষ কথা: সামনে আরও বাড়বে উত্তাপ

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচন ঘিরে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্ন ও বিতর্ক রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। কে কার পক্ষে, কে নিরপেক্ষ—এই প্রশ্ন এখন শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনের নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

পরবর্তী রাজনৈতিক দিনগুলোতে এই বিতর্ক আরও গভীর হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রশাসন যদি সত্যিই পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে সেটি প্রমাণের দায় দলগুলোর। আর যদি না হয়, তাহলে এইসব অভিযোগ শুধুই একেকটি রাজনৈতিক চাল?

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator