বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেছেন, পৃথিবীর অন্য দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংবিধান সংশোধন করেন, কিন্তু বাংলাদেশে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা এ কাজ করছে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই সংবিধান সংশোধন করে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে সেই প্রক্রিয়া ভিন্ন পথে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা সংবিধান পরিবর্তনের মতো গুরুতর ও রাষ্ট্রজীবনের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, এরা কেউ বিদেশে বসবাস করছেন—কেউ আমেরিকায়, কেউ লন্ডনে কিংবা ভিন্ন কোনো দেশে। অথচ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে কিংবা সাম্প্রতিক জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। তাদের কোনো ত্যাগ-সংগ্রাম ছিল না, দেশের জনগণের সঙ্গে মাঠে থাকার অভিজ্ঞতাও নেই। তবুও আজ তারা সংবিধানকে পাল্টে দিতে চায় এবং জনগণের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে চায়।
গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর আন্তর্জাতিক চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এ বক্তব্য রাখেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
মেজর হাফিজ তার বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১ সালে যখন রাজনৈতিক দলগুলো নেতৃত্ব দেওয়ার পরিবর্তে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, তখনই মেজর জিয়াউর রহমান জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সাধারণ মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন। তাই জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অপূর্ণ থেকে যাবে।
তিনি আরও দাবি করেন, আজ বিশ্ববাসী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে ভিন্নভাবে দেখাতে চায়। মাথাপিছু আয়ের তথ্য ব্যবহার করে দেশকে দারিদ্র্যের কাতারে দেখানোর চেষ্টা চলছে। অথচ বাস্তবে বাংলাদেশে এমন অনেক মেধাবী ও সাহসী সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে যারা জাতিকে ধনী ও গর্বিত করেছে। হাফিজ উদাহরণ টেনে বলেন, “আবু সাঈদের মতো মেধাবী সন্তান জন্মেছে বাংলাদেশে। তাই শুধু ডলার রিজার্ভ দিয়ে জাতির প্রকৃত সম্পদ মাপা যায় না।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন এবং প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বক্তব্য রাখেন। বক্তারা সবাই বর্তমান পরিস্থিতিকে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারবিরোধী বলে আখ্যা দেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা বলেন, যে কোনো জাতির মূল শক্তি তার জনগণ এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। যদি সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধনের মতো মৌলিক কাজগুলো জনগণের অজ্ঞাতে বিদেশফেরত বা অচেনা কিছু ব্যক্তির হাতে চলে যায়, তবে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে এবং জনগণের অধিকার খর্ব হবে। তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষায় জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তারা।
মেজর হাফিজ শেষ বক্তব্যে বলেন, সংবিধান কোনো দলীয় ইশতেহার নয়; এটি জাতির মূল চুক্তিপত্র। তাই এর সংশোধন হতে হবে জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। জনগণের অজান্তে বা অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংবিধান পরিবর্তনের উদ্যোগ কখনোই জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।