বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের এক উত্তেজনাকর মোড় — আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ দুই নেতা। দেশের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এই সাক্ষাৎকে ঘিরে নানা মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর জামুনায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে। জামায়াতের পক্ষ থেকে এতে অংশ নেবেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সাক্ষাতের জন্য জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগে থেকেই সময় চাওয়া হয়েছিল। এরপর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে মৌখিকভাবে দলটিকে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সময় দেওয়া হয়।
জামায়াতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে নায়েবে আমির ডা. তাহের জানান, “দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, জনগণের উদ্বেগ এবং সামনে নির্বাচন নিয়ে আমাদের কিছু প্রস্তাব ও মতামত রয়েছে। সেই আলোচনাতেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসবো।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক কেবল আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে গভীর কৌশলগত বার্তা। কারণ, একদিকে নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন ড. ইউনূস, অন্যদিকে জামায়াত রাজনৈতিক মাঠে ফের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে।
দলীয় সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, জামায়াত স্পষ্টভাবে মনে করে, বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। বরং তারা চান, ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হোক।
উল্লেখযোগ্য যে, এর আগে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সর্বদলীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা ও ঐকমত্য গঠন।
আজকের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা, রাজনৈতিক সংস্কার, এবং বিশেষভাবে জুলাই মাসে অনুষ্ঠিতব্য গণ-অভ্যুত্থান কর্মসূচির পটভূমিতে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্য ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “জামায়াতের এই পদক্ষেপ স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে—তারা এখন সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার পথে হাঁটতে আগ্রহী। একই সঙ্গে তারা রাজনৈতিক মাঠে নিজেদের অস্তিত্বও দৃশ্যমান করতে চাইছে।”
বর্তমানে দেশের রাজনীতি যে উত্তপ্ত মোড়ে রয়েছে, তাতে আজকের এই বৈঠকের প্রভাব আগামী কয়েক সপ্তাহের রাজনৈতিক চালচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।
এই বৈঠকের পর ড. ইউনূস কিংবা জামায়াতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসবে কি না, তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। তবে অদৃশ্য রাজনীতির দৃশ্যমান রূপরেখা যে আজকের রাতেই কিছুটা পরিষ্কার হবে—তা বলাই যায়।