বাংলাদেশে স্থবির হয়ে পড়া গণতন্ত্র কীভাবে আবার সচল করা যায়, সেই প্রশ্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আজই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
শনিবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় পুঁজিবাজার: দর্শন ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যনীতি বিষয়ক জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে আমীর খসরুর এই বক্তব্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কোন পথে যাবে—গণতন্ত্রের পথে, নাকি একনায়কতন্ত্রের পথে—তা নির্ধারণ হবে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা চাই, একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই বিষয়েই আজ ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।"
পুঁজিবাজার নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা:
রাজনৈতিক ইস্যুর পাশাপাশি পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগ প্রসঙ্গেও বক্তব্য দেন আমীর খসরু। তিনি জানান, বিএনপি যদি ভবিষ্যতে সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে তারা দেশের পুঁজিবাজারকে পুনর্গঠন ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রূপ দেবে। “আমরা দায়িত্ব নিলে পুঁজিবাজারের সুশাসন নিশ্চিত করবো। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে পুঁজিবাজারে যে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা চলছে, তা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকারের সদিচ্ছার অভাবের প্রতিফলন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এ খাতকে টেকসই ও শক্তিশালী করতে আমরা ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করবো।”
ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের প্রেক্ষাপট:
উল্লেখ্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন। মানবাধিকার, ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্র নিয়ে তাঁর বক্তব্য নানা মহলে আলোড়ন তুলেছে। বিএনপির সঙ্গে তার এই সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এটি হতে পারে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সমঝোতার প্রাথমিক ধাপ।
বিশ্লেষকদের মত:
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি একদিকে গণতন্ত্রের ফেরার কথা বলছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি দেখাচ্ছে—যা দলটির একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক রূপরেখারই অংশ। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের আস্থার সংকট ও দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রেক্ষাপটে বিএনপির এমন প্রতিশ্রুতি জনমনে প্রভাব ফেলতে পারে।
এই বক্তব্য শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং একটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেছে—যেখানে গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে একসূত্রে বাঁধার চেষ্টা রয়েছে।