ব্রিটিশ রাজনীতিতে নয়া আলোড়ন তুলেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা নাকি যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতেও উদ্যোগী হয়েছেন।
টিউলিপ এসব অভিযোগ তুলে একটি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন, যা পাঠানো হয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান Stephenson Harwood LLP এর মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম স্কাইনিউজ এই চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করেছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ইউনূস ও দুদক মিলে টিউলিপের সুনাম বিনষ্টের জন্য একটি পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত প্রচার-যজ্ঞ শুরু করেছে।
নোটিশে টিউলিপ সিদ্দিক স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন, “আমার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তারা শুধু আমাকে টার্গেট করেনি, আমার দল ও নির্বাচনী এলাকাকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।”
নোটিশে জানানো হয়, ১৮ মার্চ ও ১৫ এপ্রিল তারিখে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। পরে ৪ জুন আরেকটি চিঠি পাঠানো হয় ড. ইউনূসকে। কিন্তু এসব চিঠির একটিরও জবাব দেওয়া হয়নি, যা টিউলিপের পক্ষে স্পষ্টতই এক ধরনের অগ্রহণযোগ্য অবহেলা।
স্টেফেনসন হারউড দাবি করে, টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে যে ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে, তার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ড. ইউনূস ও দুদককেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারা উল্লেখ করে, “এই চিঠিপত্রে আমরা দেখিয়েছি— টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটি অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
নোটিশে আরও বলা হয়, ইউনূস যখন লন্ডনে সফর করছিলেন, তখন টিউলিপ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, দুদকের অভিযোগ নিয়ে সরাসরি আলোচনা করা। কিন্তু ইউনূস সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি। এতে হতাশা প্রকাশ করে বলা হয়, “এটি দুঃখজনক এবং একজন জনপ্রতিনিধির প্রতি সম্মানহানিকর আচরণ।”
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস তার সাক্ষাৎ না করার কারণ ব্যাখ্যা করেন, তবে সেই ব্যাখ্যাকে ‘অসম্পূর্ণ’ এবং ‘গভীরভাবে বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে অভিহিত করেছে টিউলিপের আইনি দল। তারা বলেন, “একজন প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে এমন ভোঁতা উত্তর আসা হতাশাজনক।”
স্টেফেনসন হারউড মনে করে, এই সাক্ষাৎ এড়িয়ে যাওয়ার পেছনে দুটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইউনূস ও দুদক যেসব অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলো সত্য নয়। দ্বিতীয়ত, তারা জানতেন যে টিউলিপের সঙ্গে দেখা হলে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের সত্যতা প্রকাশ পেয়ে যাবে। এ কারণে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ‘আড়ালে’ থাকার পথ বেছে নিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়, “যদি সত্যিই তদন্ত চলছে, তবে তা প্রকাশ্যে আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত নয়। বরং একজন ব্রিটিশ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করাটা অনভিপ্রেত।
টিউলিপের আইনি টিম দুদককে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, “৩০ জুনের মধ্যে আমাদের চিঠির জবাব না পেলে আমরা ধরে নেব, এই ইস্যু নিয়ে আর কোনো বক্তব্য আপনারা দেবেন না এবং এই অপপ্রচারও বন্ধ হয়েছে।”
তারা আরও বলেন, “অভিযোগ তোলার আগে উপদেষ্টা ইউনূসের উচিত ছিল সঠিক তথ্য যাচাই করা। একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘চালানো প্রচারণা’র দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
এই উকিল নোটিশ শুধু একটি আইনি কাগজ নয়— এটি বাংলাদেশের রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি স্পষ্ট বার্তা।
টিউলিপ সিদ্দিক এবার আর চুপ থাকেননি— তিনি সরাসরি জবাব দিয়েছেন। এবার নজর থাকবে, ড. ইউনূস ও দুদক কী জবাব দেন।



















