পর্ব ৩: শ্বাস নিতে গেলেই বিপদ!
নতুন বাজারের ‘ধুলা অ্যাভিনিউ’-এ জনজীবন হাঁসফাঁস, বাতাসে মিশে আছে অবহেলার বিষ
সুমন হাওলাদার
প্রতিনিধি, ঢাকা
---
১০০ ফিট মাদানি এভিনিউ—এ যেন এক হাঁটাচলা নয়, ধুলোর মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই
নতুন বাজারের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করেন। কিন্তু হাঁটা নয়, মনে হয় তাঁরা অংশ নিচ্ছেন ‘ধুলো সহ্য করার অলিম্পিকে’। রাস্তা যেন মিনি সাহারা—যেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাস একেকটা চ্যালেঞ্জ।
খোঁড়াখুঁড়ি শেষ, কিন্তু ধুলো যাত্রা চলছে দুর্বার গতিতে
রাস্তা খোঁড়া হয়েছে বহু আগেই, কিন্তু মেরামতের কোনো ঠিক নেই। ফলে সৃষ্টি হয়েছে ধুলোর এক অবিরাম ধোঁয়াশা। রাস্তার ওপর দিয়ে হাঁটলে বোঝার উপায় নেই, এটা কুয়াশা না কি ধূলিঝড়?
ধুলোর দাপটে কেমন দশা—চুলে ধুলো, গায়ে ধুলো, শ্বাসে কষ্ট
চুল সাদা, জামা বাদামি, মুখ মাস্কে ঢাকা—এটাই এখন পথচারীদের নিত্যদিনের চেহারা। কেউ পানি খুঁজছেন, কেউ চোখ রগড়াচ্ছেন, কেউ কাশছেন হাঁসফাঁস করে। ধুলো যেন নতুন ‘নাগরিক চাঁদাবাজ’—কারও রেহাই নেই।
‘পানি দেয়’, কিন্তু যেন নাটকের দৃশ্যায়নে
পানি দেওয়া হয় মাঝে মধ্যে, ঠিক তখনই যখন কেউ দেখছে। কার্যকারিতা নেই, কারণ গাড়ি চলার ধাক্কায় তখন ধুলো আকাশে উড়েই গেছে। এ যেন দায়সারা অভিনয়—জনগণের চোখে ধুলো দেওয়া!
ব্যবসা নয়, এখন ধুলোর সাথে যুদ্ধই আসল পেশা
একজন দোকানদার বললেন, “সকালে মাল ডিসপ্লে করি, বিকেল হতে হতে ধুলোয় নিজেই চিনতে পারি না!” দোকানদারি এখন যেন ‘ধুলো ম্যানেজমেন্ট’-এর উপর নির্ভরশীল।
স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক—কিন্তু কর্তার মুখে তালা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধুলায় রয়েছে মারাত্মক ক্ষুদ্রকণা (PM2.5, PM10) যা ফুসফুসে গিয়ে জমে। এতে বাড়ছে হাঁপানি, কাশি, শিশু ও বৃদ্ধদের অসুস্থতা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন যেন ভাবছে, “ধুলো তো উড়ে যায়, সমস্যা কোথায়?”
নাগরিকেরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ শুনছে না
স্থানীয়রা বলেন, “রাস্তা ঠিক করো, নিয়মিত পানি দাও!” কিন্তু তাদের আওয়াজ যেন পড়ে যাচ্ছে ধুলোর স্তূপে। প্রশাসন চুপ, সেবাবিভাগ নিশ্চুপ—এ যেন নীরব এক ধুলো-ষড়যন্ত্র।
---
শেষ প্রশ্ন: এই শহরে নিঃশ্বাস নেওয়াও কি বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে?
পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, খুব শিগগিরই এই এলাকায় চালু হবে ‘শ্বাস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’। কারণ, এই শহরে এখন নিঃশ্বাস নিতেও সাহস লাগে!
---
[চলবে...]