রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন দোকানদার ও সাধারণ ছাত্র-জনতা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠে যে, প্রাণ বাঁচাতে তাদের শরণ নিতে হয় থানার ওসির রুমে।
এই ঘটনার ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে এবং জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ‘চায়ের বাড়ি’ নামের একটি খাবারের স্টলে হামলা চালানো হয়েছে। আকিব হোসেন নামের এক ব্যক্তি এই স্টলের মালিক এবং তিনি নিজেই ঘটনার সময় ফেসবুক লাইভে এসে বলেন,
“আমি চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, যৌথবাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছি। আজ সেই কারণেই আমার স্টলে হামলা হয়েছে। এটা মেলার নামে সন্ত্রাস।”
তিনি জানান, প্রতিবাদের পর তার স্টল লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে চালানো হয় ভাঙচুর। এরপর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ছাত্র ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে প্রতিবাদে নামেন। এক পর্যায়ে তারা সবাই থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে, দুর্বৃত্তরা আবারও হামলার চেষ্টা চালায়—এবার লক্ষ্য থানাই।
থানায় হামলার অভিযোগ: অস্ত্রধারীদের তাণ্ডব!
ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আকিব হোসেন ও তার সঙ্গে থাকা ছাত্র-জনতা যখন থানায় যান, তখন এক-দেড়শ জনের একটি অস্ত্রধারী গোষ্ঠী সেখানে হামলা চালাতে আসে। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তারা সবাই থানার ভিতর ঢুকে ওসির রুমে গাদাগাদি করে আশ্রয় নেন।
লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, অবরুদ্ধ অবস্থায় ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষেরা বলছেন,
“আমরা সেনাবাহিনী না আসা পর্যন্ত এই রুম থেকে বের হবো না।”
তাদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। কেউ কেউ বলছিলেন, তারা এখন নিজের জীবন নিয়েই শঙ্কিত। থানার নিরাপত্তা বলয়ের মাঝেও যে তারা এতটা অনিরাপদ—এটা তাদের কণ্ঠেই স্পষ্ট।
পুলিশ কী বলছে?
এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পর থানার সামনের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে।
স্থানীয়দের অনেকে বলছেন, মেলার নামে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাটিতে চাঁদাবাজি চলে আসছিল। দোকানিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হতো। কেউ তা দিতে রাজি না হলে, বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হামলার শিকার হতেন। এই চক্রের বিরুদ্ধেই মুখ খুলেছিলেন আকিব হোসেন।
জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই লিখছেন,
“থানায় গিয়েও যদি নিরাপদ না থাকি, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য কোথায় নিরাপত্তা?”
বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছেন।
:
রাজধানীর একটি থানা, যেখানে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা চাইতে যায়, সেই জায়গাটিই আজ পরিণত হয়েছে ভয়ের গহ্বরে। চাঁদাবাজদের সাহস এতটাই বেড়ে গেছে যে তারা থানার মতো নিরাপদ জায়গাতেও হামলা চালাতে দ্বিধা করে না।
এই ঘটনাটি শুধু একটি দোকানের ওপর হামলার নয়, এটি পুরো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সঠিক তদন্ত ও বিচার না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।