পান্তা-ইলিশ নয়, প্রকৃত বাঙালি ঐতিহ্য হলো চৈত্র সংক্রান্তির শাক আর বৈশাখের বাতাসা!—ফরিদা আখতারের ব্যতিক্রমী বার্তা
বাংলা নববর্ষ মানেই পান্তা-ইলিশ—এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার প্রচলন প্রকৃত বাংলা সংস্কৃতির অংশ নয়। এটি ঢাকাকেন্দ্রিক একটি আরোপিত সংস্কৃতি।"
সোমবার (৭ এপ্রিল), সচিবালয়ে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। সেখানে তিনি ইলিশের ভবিষ্যৎ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ’ পালন করা হবে। এই সময় জাটকা ধরা আইনত নিষিদ্ধ। যদি আমরা এই সময়ে জাটকা সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা রাখি, তাহলে ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে। এতে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং স্বাভাবিকভাবেই দামও কমবে।”
ফরিদা আখতার পহেলা বৈশাখের ইলিশ খাওয়ার প্রবণতা নিয়ে বলেন, “এই সময়ে ইলিশ ধরা যেমন বেআইনি, তেমনি এই মাছ খাওয়ার প্রচলনও সাংস্কৃতিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া। শুধু ইলিশ না খেলেই তো বৈশাখ শেষ হয়ে যায় না। মরিচ ভর্তা, অন্য মাছ, কিংবা পান্তার সঙ্গী হিসেবে অনেক কিছুই খাওয়া যায়।”
তিনি আরও বলেন, "চৈত্র সংক্রান্তি, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের আগের দিনটি বাঙালির ঐতিহ্যিক উৎসবের দিন। ঐদিন কোনো আমিষ খাওয়ার রেওয়াজ নেই। বরং সেই দিনে ১৪ প্রকার শাক খাওয়ার চল রয়েছে। আর নববর্ষের দিনটিতে বাতাসা, দই-চিড়া বা ছাতুর শরবত খাওয়াই ছিল প্রচলিত সংস্কৃতি।"
উপদেষ্টা আরও বলেন, “ইলিশ না খেলে উৎসব থেমে যায় না। আমাদের ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ, সেখানে নানা ধরনের মাছ ও খাদ্য সংস্কৃতি রয়েছে। তাই ঐতিহ্য ও প্রকৃতি রক্ষার ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।”
তিনি জাটকা রক্ষায় দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন এবং বলেন, “ইলিশ ধরা বন্ধ থাকলেও উৎসবের প্রাণ থেমে থাকবে না। বরং এই সময়টিকে আমরা সচেতনতার উৎসবে রূপ দিতে পারি—যা হবে আমাদের সাংস্কৃতিক দায়িত্ব ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার অনন্য দৃষ্টান্ত।