অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক চমক সৃষ্টি করেছেন। বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন যে, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি জানান, ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছেন এবং শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, “আমি ভোট করব, নমিনেশন চেয়েছি। এখনও আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বে আছি, তবে সময় এলে পদত্যাগ করব। দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এখন ভোটে যাওয়াই আমার দায়িত্ব।”
তার এই ঘোষণায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ক্ষমতাসীন সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন অ্যাটর্নি জেনারেলের এভাবে পদত্যাগ করে বিরোধী দলের মনোনয়ন চাওয়া বাংলাদেশে বিরল ঘটনা। এটি বিচার বিভাগ ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যে রায় পরিবর্তন করেছেন, তা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “কোনো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এ সিদ্ধান্ত দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করেছে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান আরও বলেন, “আগামী দিনে আপিল বিভাগ যেভাবে রায় দেবেন, তা শুধু এই প্রজন্মের নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও উদাহরণ হয়ে থাকবে। আদালতের রায়ই নির্ধারণ করবে আমরা গণতন্ত্রের পথে আছি নাকি ক্ষমতার খেলায়।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসাদুজ্জামানের পদত্যাগের ঘোষণা বিএনপির জন্য বড় একটি বার্তা বহন করে। বিশেষ করে, তিনি যদি সত্যিই প্রার্থী হন এবং মাঠে নামেন, তবে এটি সরকারের জন্যও একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।
এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান আমাদের সঙ্গে যে যোগাযোগ করেছেন, তা ইতিবাচক। তার যোগদান আমাদের আন্দোলনে নতুন গতি আনবে।”
অন্যদিকে, সরকারি মহল বলছে, এই ঘোষণার মাধ্যমে আসাদুজ্জামান তার পেশাগত দায়িত্ব থেকে সরে গেছেন এবং এ সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তিগত। তবে অনেক আইনজীবী বলছেন, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা, যা আইনি ও রাজনৈতিকভাবে দীর্ঘ আলোচনার জন্ম দেবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ঘোষণা শুধু একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং দেশের বিচার ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বিচার বিভাগের শীর্ষ পদে থাকা একজন ব্যক্তি যখন সরাসরি রাজনীতিতে নামছেন, তখন এটি গণতন্ত্রের কাঠামো, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে আসাদুজ্জামান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেননি, তবে সূত্র বলছে, তিনি আগামী সপ্তাহেই পদত্যাগ করবেন এবং মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। তার এই পদক্ষেপ আগামী নির্বাচনে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।



















