নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থী অপূর্ব পালকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রবিবার (৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির এক জরুরি বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মানসুর হাশিম স্বাক্ষরিত এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরীফ অবমাননার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপূর্ব পালকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে, যখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী অপূর্ব পালকে পবিত্র কুরআন অবমাননা করতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বিষয়টি লক্ষ্য করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করেন।
ঘটনার পর অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন অপূর্ব পালের অবমাননাকর কর্মকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত নিজেই তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন, যা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
এই ঘটনার জেরে দিবাগত রাত ১টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অভিযুক্তের বাসার সামনে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অপূর্ব পালকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা তাকে মারধর করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অবমাননার মতো গুরুতর ঘটনায় তাদের অবস্থান সম্পূর্ণ জিরো টলারেন্স। এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না এবং দোষীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা আরও জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভবিষ্যতেও এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এই ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সাধারণ জনগণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, অপূর্ব পালের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অবমাননার সাহস না পায়।