কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আবারও চরমে পৌঁছেছে। সীমান্তে প্রতিদিনই গোলাগুলি ও হামলার ঘটনা ঘটছে, পাল্টা হামলা হয়েছে উভয় দিক থেকেই। এমন এক অতি সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তার দেশের ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (NCA) এর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছেন। এই কমিটি মূলত পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের দেখভাল ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সর্বোচ্চ সংস্থা।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর তথ্য শাখা আইএসপিআর (ISPR) জানায়, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের আহ্বানে এই জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের ভবিষ্যৎ কৌশল এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।
ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি একটি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় সংস্থা, যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কমিটিতে আরও রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা উৎপাদন বিষয়কমন্ত্রী, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা এবং স্ট্রাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশনের (SPD) মহাপরিচালক।
এসপিডি (SPD) হলো সেই সংস্থা যেটি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার এবং পারমাণবিক অবকাঠামোর সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এই সংস্থার ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কেবলমাত্র অস্ত্র ব্যবস্থাপনাই নয়, বরং দেশটির পারমাণবিক নীতির রূপরেখা নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই বৈঠকের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া রক্তক্ষয়ী হামলাকে। ২২ এপ্রিল সেখানে এক বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত এই ঘটনার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং পাল্টা জবাবে ৭ মে রাতে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
ভারতের এই হামলায় পাকিস্তানের ভেতরে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে বিমান ও ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে, যদিও ভারত এই দাবি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব যদি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, তবে তা শুধু কাশ্মীরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—পুরো অঞ্চলকেই ঘিরে ফেলবে যুদ্ধের ছায়া।
অন্যদিকে, এমন বৈঠক ও পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে, যা এক ভয়াবহ সংকট ডেকে আনবে।
বর্তমানে গোটা পাকিস্তানে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুই দেশের মাঝে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত কাশ্মীর ইস্যু এখন নতুনভাবে দানা বাঁধছে। সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এক প্রকার হুঁশিয়ারি। আন্তর্জাতিক মহলের এখনই উচিত দুই দেশের মাঝে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া, নইলে সামান্য উসকানিতেই চূড়ান্ত বিপর্যয় নেমে আসতে পারে দক্ষিণ এশিয়ায়।