ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে নতুন করে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ভারতের সামরিক কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক উসকানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসলামাবাদ বলেছে, যদি ভারত পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার চিন্তা করে, তবে ‘ভারতের মানচিত্রও ইতিহাস থেকে মুছে যাবে’। শনিবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইএসপিআর সতর্ক করে বলেছে, ভারতীয় কর্মকর্তাদের এই ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য শুধু আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে সংঘাত ও অযৌক্তিক আগ্রাসনের জন্ম দিতে পারে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, যেকোনো নতুন সংঘাতের শুরু হলে তারা এক বিন্দু ছাড় দেবে না, আর এর পরিণতি হবে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ।
এই বিবৃতিটি এসেছে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধান অমর প্রীত সিংয়ের এক মন্তব্যের পর। তিনি সম্প্রতি দাবি করেন, গত মে মাসে সংঘাতে ভারত পাকিস্তানের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান—এফ–১৬ এবং জেএফ–১৭—ভূপাতিত করেছে। তবে তার এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই মন্তব্যকে “ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, ভারত দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে শিকার হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে, অথচ বাস্তবে তারাই দক্ষিণ এশিয়া এবং এর বাইরেও সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিচ্ছে। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের প্রকৃত মুখ চিনে ফেলেছে।
আইএসপিআর আরও বলেছে, ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের পথ বেছে নেয়, তবে পাকিস্তান প্রতিরোধে একটুও পিছু হটবে না। “ভারত যদি পাকিস্তানের মানচিত্র মুছে দেওয়ার চিন্তা করে, তবে ভারতের মানচিত্রও মুছে যাবে,” উল্লেখ করে সংস্থাটি। তারা আরও যোগ করেছে, “নতুন কোনো যুদ্ধ বা সংঘাত শুরু হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ, এবং ভারতকে সেই মূল্য চোকাতে হবে।”
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বেড়ে ওঠে গত মে মাসে কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর। ওই হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। ভারত দাবি করে, পাকিস্তানের সহায়তায় এ হামলা চালানো হয়েছিল। ইসলামাবাদ অবশ্য শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। হামলার জবাবে ভারত চালায় ‘অপারেশন সিঁদুর’, আর পাকিস্তান পাল্টা ব্যবস্থা নেয় ‘অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস’ নামের সামরিক অভিযানের মাধ্যমে। দুই দেশের মধ্যে সংঘাত ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিতে থাকলে, ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
তবে যুদ্ধবিরতির পরও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। সাম্প্রতিক মন্তব্য ও পাল্টা প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে স্পষ্ট, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই এখন নতুন করে সংঘাতের মুখে দাঁড়িয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা এই পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া গোটা অঞ্চলের জন্যই বিপজ্জনক বার্তা বহন করছে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, দুই দেশের উসকানিমূলক ভাষা এবং পাল্টাপাল্টি সামরিক হুমকি যদি অব্যাহত থাকে, তবে পরিস্থিতি যে কোনো সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এখনই মধ্যস্থতায় নামা এবং দুই দেশের মধ্যে সংলাপের পথ সুগম করা।