জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি জেলায় সীমান্ত পার থেকে চালানো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হঠাৎ গোলাবর্ষণে নিহত হয়েছেন ভারতের অতিরিক্ত জেলা উন্নয়ন ডেপুটি কমিশনার (এডিডিসি) রাজ কুমার থাপা।
শনিবার, ১০ মে ভোররাতে যখন রাজৌরি শহর ঘুমিয়ে ছিল, তখন হঠাৎ শুরু হয় এ হামলা। সকাল ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে একটি বিস্ফোরক গোলা সরাসরি আঘাত করে থাপার সরকারি বাসভবনে। প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ শুনেই তিনি বাইরে বেরিয়ে আসেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে যান ঘরের ভেতর। ঠিক সেই মুহূর্তেই আসে দ্বিতীয় গোলাটি—যেটি সরাসরি ঘরে বিস্ফোরিত হয় এবং মুহূর্তেই কেড়ে নেয় এই কর্তব্যপরায়ণ কর্মকর্তার প্রাণ।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা রাজৌরি শহরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের বরাত দিয়ে জানা যায়, বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে শহরের বাসিন্দাদের ঘুম ভেঙে যায়। সীমান্তবর্তী এলাকায় একের পর এক গোলার শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন অংশে সতর্কতা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। মানুষজনকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। জরুরি সেবাগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
ঘটনার পর এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন,
“রাজৌরি থেকে হৃদয়বিদারক সংবাদ পেলাম। এক জন নিষ্ঠাবান প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে আমরা হারালাম। মাত্র গতকালই তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা সভায় অংশ নিয়েছিলেন। অথচ আজ পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তাঁর জীবন শেষ হয়ে গেল। আমার শোক জানানোর ভাষা নেই।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা গেছে, সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া একাধিক গোলার বিকট শব্দে রাজৌরির আকাশ কেঁপে ওঠে। শহরের বেশ কিছু অংশে মানুষ আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ বহুদিন শুনিনি। সকালেই খবর পেলাম, আমাদের জেলার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। মনে হচ্ছে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে এবং গোলাবর্ষণের উৎস শনাক্তে কাজ শুরু করেছে।
এদিকে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে—এই হত্যাকাণ্ড কী উদ্দেশ্যে ঘটানো হলো, সেটি নিয়ে।
এই ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো, জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা নাজুক।
রাজ কুমার থাপার মতো একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তার এমন মৃত্যু প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর শোক এবং ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।