পাকিস্তান-রাশিয়া মৈত্রী: দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে পালাবদলের ইঙ্গিত

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মূল প্রতিবেদন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্কের উষ্ণতা। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন ও উপপ
মূল প্রতিবেদন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্কের উষ্ণতা। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন ও উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি ওভারচুকের ইসলামাবাদ সফর এবং এক দশকের কৌশলগত সম্পর্কোন্নয়ন এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাকিস্তান ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর সূচনা হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মস্কো সফরের মাধ্যমে। সফরটি হয়েছিল ঠিক রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের প্রাক্কালে, যা গ্লোবাল জিওপলিটিক্সে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করে। অতীত থেকে বর্তমান দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক কৌশলে চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বরাবরই কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ছিল। তবে পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্ক এখন নতুন একটি সমীকরণ গড়ে তুলছে। সোভিয়েত যুগে সম্পর্ক ছিল ভিন্ন রূপে। ১৯৫০-এর দশকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ মোকাবিলার অংশ হিসেবে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গী হয়। একই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে সমর্থন করেছিল। এরপর সোভিয়েতদের সহযোগিতায় করাচি স্টিল মিল গড়ে তোলা এবং ১৯৬৮ সালে সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সেই কোসিগিনের পাকিস্তান সফরও কৌশলগত মৈত্রীর উদাহরণ হয়ে রয়েছে। তবে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের পর থেকে পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক উষ্ণতা বর্তমান পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্কের পুনরুত্থানের মূল কারণ রাশিয়ার এশিয়া-কেন্দ্রিক কৌশল। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর প্রকল্প এবং দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সহযোগিতার নতুন সমীকরণ রাশিয়াকে পাকিস্তানের দিকে টেনেছে। ২০১৭ সালে পাকিস্তান সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় যোগ দেয়। করাচি-লাহোর গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের চুক্তি ও সামরিক মহড়া এই সম্পর্কের গভীরতাকে বাড়িয়েছে। ২০২৪ সালে পাকিস্তান-রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ তবে এই সম্পর্ক জোরদার করার পথে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। পাকিস্তানের দুর্বল অবকাঠামো, অর্থনৈতিক সংকট এবং পশ্চিমাপন্থী শাসকশ্রেণির মানসিকতা রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের পথে প্রধান অন্তরায়। পাকিস্তানের শোধনাগারগুলোতে অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতার অভাব রাশিয়া থেকে তেল আমদানি প্রক্রিয়া ব্যর্থ করেছে। একইসঙ্গে, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহ্যগত সম্পর্ক পাকিস্তান-রাশিয়া মৈত্রীর ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতের সম্ভাবনা পাকিস্তান ও রাশিয়া তাদের অতীতের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ভবিষ্যতে কেমন সহযোগিতা গড়ে তুলতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক চিত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। শক্তি, নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই মৈত্রী উভয় দেশের জন্য নতুন সুযোগের দ্বার খুলে দিতে পারে। লেখক: প্রশান্ত সিংহ, গবেষক, তক্ষশীলা ইনস্টিটিউশন, বেঙ্গালুরু।
कोई टिप्पणी नहीं मिली