পা র মা ণ বি ক কর্মসূচিতে সহযোগিতার বদলে বো মা হা ম লা পেল ই রা ন'..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রাশিয়া জাতিসংঘে জানালো, ইরান সহযোগিতা চেয়েছিল, অথচ হামলা পেয়েছে! এনপিটিতে ইসরায়েলের অনাগ্রহ আর ইরানে মার্কিন হামলা নিয়ে বিশ্বে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।..

জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজিয়া একটি বিস্ফোরক বক্তব্য দিয়ে কাঁপিয়ে দিলেন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গন। তিনি বললেন, ইরান যখন তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছিল, তখন তারা সহযোগিতার বদলে পেয়েছে বোমা হামলা! এই পরিস্থিতিকে তিনি আখ্যা দিলেন ‘লজ্জাজনক’ ও ‘ভণ্ডামিপূর্ণ’ হিসেবে।

গতকাল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে নেবেনজিয়া বলেন, আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ইসরায়েল এখনো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি এনপিটিতে সই করেনি। ফলে দেশটিতে আইএইএ-র পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন হয় না। অথচ ইরান, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আইএইএ পরিদর্শিত দেশ, তার ওপরই চালানো হচ্ছে হামলা। হামলা করছে সেই দেশ, যে নিজেই এনপিটিতে সই করতে অস্বীকৃতি জানায়! এটা ভণ্ডামির চূড়ান্ত রূপ।

নেবেনজিয়া সরাসরি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইঙ্গিত করে বলেন, ইরান সবসময় শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির পক্ষে কথা বলেছে, কিন্তু তবুও তারা ধারাবাহিক হামলার শিকার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তিনি আহ্বান জানান—এই দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।

জাতিসংঘে এই আলোচনা যখন চলছে, তখন বাস্তবেও উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। গত ২২ জুন রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, “মার্কিন বাহিনী ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফোর্ডো, নাতানজ ও ইসফাহান।” ট্রাম্প বলেন, “ইরানকে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। না হলে আরও ভয়াবহ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকুক।”

এদিকে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইসরায়েলও গত ১৩ জুন থেকে একাধিকবার ইরানে বোমা হামলা চালিয়েছে। এসব হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো। তেহরান দাবি করেছে, এসব হামলার মাধ্যমে তাদের গবেষণাগার, পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও সংবেদনশীল তথ্যভাণ্ডারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এনপিটি স্বাক্ষর না করেও ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কার্যত অবাধে এগিয়ে চলেছে, আর স্বাক্ষরকারী ও পরিদর্শিত দেশ ইরান বারবার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভণ্ডামি, পক্ষপাতিত্ব এবং পশ্চিমা নীতির দ্বিচারিতা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।

রাশিয়া এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বলেছে, “বিশ্বে এমন এক বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে, যেখানে যারা আইন মানে, তাদের শাস্তি দেওয়া হয়; আর যারা আইন ভাঙে, তারা থেকে যায় দৃষ্টির বাইরে।”

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে ইরান প্রশ্নে বড় ধরণের মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। রাশিয়া ও চীন ইতোমধ্যেই ইরানের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরানকে আরও চাপে ফেলতে চায়।

বিশ্বের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানকে লক্ষ্য করে বারবার হামলা চালানো হলে, তারা চুপ থাকবে না। এমন পরিস্থিতি যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ইরান পারমাণবিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাইলেও, বাস্তবতা বলছে তারা বোমার আঘাতে জর্জরিত। পশ্চিমা বিশ্ব একদিকে শান্তি, সংলাপের কথা বলে; অন্যদিকে গোপনে চালায় নিষ্ঠুর আক্রমণ। রাশিয়ার বক্তব্য বিশ্ববাসীকে নতুন করে ভাবাচ্ছে—নিরাপত্তার নামে এই 'নির্বিচার আগ্রাসন' আর কতকাল চলবে?

Inga kommentarer hittades