অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে সুপারমার্কেট থেকে এক কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলারের পণ্য চুরির অভিযোগে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক বলে জানিয়েছে ভিক্টোরিয়া পুলিশ।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনায় সুপারমার্কেট থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য চুরির অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের ১৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, এই চক্রটি গত পাঁচ মাস ধরে সংগঠিতভাবে চুরি চালিয়ে এসেছে এবং তাদের হাত দিয়ে অন্তত এক কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার মূল্যের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৯ কোটি টাকা) পণ্য গায়েব হয়েছে।
পুলিশের হাতে ধরা পড়া সিন্ডিকেট সদস্যদের বেশিরভাগই ভারতীয় নাগরিক। তারা অস্থায়ী ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা কিংবা ব্রিজিং ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছিল। ভিক্টোরিয়া পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এদের মূল উদ্দেশ্য শুধু ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণ নয়, বরং চুরি করা পণ্য একটি বড় অপরাধচক্রের কাছে সরবরাহ করা। পরে সেই পণ্য পুনরায় বাজারে বিক্রি করা হতো, যা একে আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রে রূপ দিয়েছে।
ডিটেকটিভ অ্যাক্টিং ইন্সপেক্টর রাচেলে সিয়াভারেলা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে কাজ করত। তারা বিভিন্ন সুপারমার্কেট থেকে শিশু খাদ্য, গুঁড়াদুধ, ওষুধ, ভিটামিন, প্রসাধনী, স্কিন কেয়ার সামগ্রী, টুথপেস্ট, ইলেকট্রিক টুথব্রাশ, এমনকি মধুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও সরিয়ে নিত। এসব পণ্য পরে রিসিভারদের মাধ্যমে কালোবাজারে বিক্রি করা হতো, যেখানে তাদের চাহিদা ছিল ব্যাপক।
পুলিশের হাতে আসা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত এক ব্যক্তিকে টুথপেস্টের বাক্স ও মধুতে ভরা ব্যাকপ্যাক বহন করতে গিয়ে আটক করা হয়। এই চিত্রই প্রমাণ করছে যে চোরচক্রটি সাধারণ পণ্য থেকে শুরু করে উচ্চমূল্যের ভোগ্যপণ্য পর্যন্ত সবকিছুই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল।
ভিক্টোরিয়া পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত মোট ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এদের মধ্যে সাতজনকে মূলহোতা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযোগ আনা হচ্ছে এবং পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে তদন্ত অব্যাহত থাকবে। পুলিশ আরও বলেছে, অভিযান এখনো শেষ হয়নি; আরও গ্রেপ্তার হতে পারে যেকোনো সময়।
অস্ট্রেলীয় পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ছিঁচকে চুরি ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। গত এক বছরে একক এই অপরাধের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ২৭০টি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি। ফলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
এমন অপরাধচক্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং অস্থায়ী ভিসাধারীদের সম্পৃক্ততা অস্ট্রেলিয়ার সমাজে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি শুধু আর্থিক ক্ষতির বিষয় নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় হুমকি।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সুপারমার্কেটে এখন নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং বিশেষ নজরদারি দল মাঠে নামানো হয়েছে। ভিক্টোরিয়া পুলিশের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করেছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রকে দমন করতে সরকার কোনো ছাড় দেবে না।