অসংখ্য নরমাল ডেলিভারি করিয়ে প্রশংসিত দক্ষিণাঞ্চলের অগ্রদূত স্বাস্থ্যকর্মী রিমা ।..

মুহাম্মাদ রাকিব avatar   
মুহাম্মাদ রাকিব
স্টাফ রিপোর্টার :
প্রকাশিত : ১৭:০৮ পিএম, ০২ মে ২০২৫

 পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ও চরকাজল ইউনিয়ন এর নারীদের নরমাল ডেলিভারি করিয়ে উক্ত উপজেলার অগ্রদূত হিসেবে অভিভূত হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী ফাতিমা আক্তার রিমা। বিগত ৬ মাসে এই দুই ইউনিয়নে প্রায় ৯০ নারীর নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন বলে স্থানীয় সুত্রের খবর।
 এ দুই ইউনিয়ন থেকে উপজেলা হাসপাতালের দুরত্ব ২৫ কিলোমিটার যার মধ্যে ০৮ কিলোমিটার নদীপথ যা পাড়ি দিতে এক ঘন্টা সময় লাগে বিগত বছরে এই দুই ইউনিয়নে ২২ জন নারী সন্তান প্রসবকালীন অবস্থায় মারা যায়।  বিকাল ৫ টার পর লঞ্চ,  ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখা দিত অনিশ্চয়তা। চরবিশ্বাস ইউনিয়নের পুত্র বধু রিমা ২০২৪ সালে চরবিশ্বাসে আসার পর থেকে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে আর কোন সমস্যায় পড়তে হয় না।  ফোন দিলেই চলে আসেন রিমা নরমাল ডেলিভারি করিয়ে  চলে যান শুধু মোটরসাইকেল ভাড়া দিলেই হয়। বরগুনার মেয়ে রিমা ফরিদপুর সরকারি ম্যাটস থেকে লেখাপড়া শেষ করে পটুয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি করেন। পরে পটুয়াখালী ও গলাচিপা চাকরি করেন।  ২০২৪ সালে শ্বশুরবাড়ি এসেই শুরু করেন নরমাল ডেলিভারির কাজ। ইউনিয়নে ভালো কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকলেও সে অভাব পূরণ করছেন ফাতিমা আক্তার রিমা। দুই ইউনিয়নের লোকজনের আশার বাতিঘর এখন এই মানবদরদী স্বাস্থকর্মী। 

 জানেন কি ? 

ব্যবসা নামক  সিজারে মা ও সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে :

 অন্তঃস্বত্ত্বার সবথেকে বড় ভয় প্রসবকালীন ব্যথা। এই ব্যথা থেকে রেহাই পেতে অনেকে নিজ থেকেই সিজারের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এভাবে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সিজার। চিকিৎসকদের তথ্যানুযায়ী গত দশ বছরে দেশে সিজারের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণ। সিজারের পরে মায়ের শরীরে দেখা দেয় নানা সমস্যা।

সিজার মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য কেমন ঝুঁকিপূর্ণ, এর ফলে মাকে সারাজীবন কেমন স্বাস্থ্য জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় আমরা আজ সে বিষয়ে কথা বলব।
 একটা অপারেশন। সিজার করার সময় মায়ের প্রচুর ব্লিডিং হতে পারে। মাকে যে এ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয় সেই এ্যানেস্থেসিয়া নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। অপারেশন করতে গিয়ে জরায়ু খুলতে গিয়ে অনেক সময় খাদ্য নালীসহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

যেকোনো সার্জারি করতে গেলে আমরা অপারেশন থিয়েটারে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হই। যেমন মায়ের রক্তক্ষরণ হওয়া, মায়ের শরীরের বিভিন্ন জায়গা- যেমন খাবার নালীতে, প্রস্রাবের থলিতে ইনজুরি হওয়া। এমন কোনো পরিস্থিতি যদি হয়, এবং সেটা যদি মায়ের থার্ড বা ফোর্থ টাইম সিজার হয় তাহলে মায়ের জন্য একটা ঝুঁকির বিষয় যেটা তাকে সারা জীবন ভুগতে হয়।


যেকোনো অপারেশনেই শরীরে একটা প্রভাব তো পড়বেই। তার চেয়ে বড় বিষয় মায়ের পেটে যে কাটা টা থাকে সেই কাটা থেকে পরবর্তীতে হার্নিয়া হতে পারে। হার্নিয়া হলে পেটের চামড়াটা উইক হয়ে যায় এবং সেদিক দিয়ে খাদ্য নালী বাইরের দিকে পুশ করে। কারো কারো সেলাইতে ইনফেকশন হয়ে যায়। আবার সেলাই লাগে। কারো কারো ক্ষেত্রে সারাজীবন সেই সেলাইতে ব্যথা থেকেই যায়। অনেক সময় সেলাইটা ফুলে যায়, কালো হয়ে যায়। অনেক সিজারিয়ান মায়েরা আমাদের জানান, বিছানা থেকে উঠতে গেলে, বসতে গেলে, হাঁচি বা কাশি দিতে গেলে সেলাইয়ের জায়গায় তারা ব্যথা অনুভব করেন। যারা দুটো বা তিনটা সিজার করিয়েছেন তাদের জন্য এটা খুব কমন সমস্যা।


অপারেশনের পর অনেক সিজার রোগীর এ্যাসিডিটি হয়। কেউ কেউ মনে করেন তাদের পায়খানা ভালোভাবে হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ ব্যথাটা নিতে পারেন না। অপারেশনের ব্যথাটা তাকে দীর্ঘদিন আবার কখনো কখনো সারা জীবন ভোগায়। যেসব মায়েদের সিজার হয় তাদের বুকে দুধ আসতে দেরী হয়। কখনো কখনো তিনদিন সময় লেগে যায়। প্রসব পরবর্তী সময়ে নড়াচড়া করতে মায়ের কষ্ট হয়। এমন অবস্থায় বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে বা বা মা নিজের কাজগুলো করতে কষ্টে পড়তে হয়।

স্বাভাবিক প্রসবের পর মায়েরা যত সহজে ওজন কমাতে পারেন সিজারে প্রসবের পর মায়েরা তত সহজে ওজন কমাতে পারেন না। অনেক সিজারিয়ান মা মনে করেন তারা দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক সিজারিয়ান মা আমাদেরকে ( ডাক্তার) জানান, তাদের মেরুদণ্ডে একটা ব্যথা হচ্ছে। সিজারের আগে অনেক সময় পেছনে একটা ইনজেকশন দেওয়া হয়। সেখান থেকে সারাজীবন অনেকের ব্যাথা হয়। অর্থাৎ, সিজার যেসব মায়েদের হয় তারা সারা জীবনই কিছু জটিলতার মুখোমুখি সব সময় হতে হয়।


লেখক: এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমসিপিএস। কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল। গাইনী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ।

לא נמצאו הערות