জুলাই অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই জুলাই সনদ কার্যকর করার জোর দাবি জানালেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে শহীদ মিনারে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর যেভাবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, সেই সরকারের সময়েই জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে।” তিনি আরও জানান, “এই সনদ হবে একটি আইনি ভিত্তির দলিল, যার ওপর নির্ভর করেই আগামী সংসদ, গণপরিষদ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠিত হবে।”
শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। নাহিদ ইসলাম মনে করেন, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখা নির্ধারণে জুলাই সনদের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি বলেন, “নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতে সংস্কারের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে পুরোনো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি আবার ফিরে আসবে। আমাদের লক্ষ্য—জুলাই সনদের ভিত্তিতে নতুন সংসদ গঠন করা এবং সংবিধান সংস্কারে গণপরিষদ গঠন করা।”
অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে ঘোষিত হয়েছে, আগামী ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছেন।
নাহিদ ইসলাম এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমরা জেনেছি, সরকারের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে একটি ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো ‘ঐকমত্য কমিশন’ যেসব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি। বাস্তবায়নের পদ্ধতি সম্পর্কেও তারা নিরব। তাই আমরা জোর দিয়েই বলছি—সনদের স্বাক্ষরের আগে এই পদ্ধতিগত বিষয়গুলো চূড়ান্ত হতে হবে।”
তিনি আরও জানান, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে, এটি যেন কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার দলিল না হয় বরং সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়।”
আগামীকাল রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিতব্য জনসমাবেশে জুলাই মাসজুড়ে চলা ‘জুলাই পদযাত্রা’র সমাপ্তি ঘোষণা করবে এনসিপি। ওই সমাবেশে ‘নতুন বাংলাদেশের’ ইশতেহার পাঠ করা হবে। নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত ৩ আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় শহীদ মিনার থেকেই এক দফা দাবি হিসেবে সরকার পতন এবং ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার বিলোপের ঘোষণা এসেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার পরিবর্তন হলেও শাসনব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন না হলে আসল পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
তিনি জানান, “জুলাই পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা ৫৯টি জেলায় মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, শহীদ পরিবার, আহত আন্দোলনকারী এবং সাধারণ মানুষের মনোভাব জেনেছি। তারা পরিবর্তন চায়—নতুন ধরনের রাজনীতি চায়। তাদের প্রত্যাশার ভিত্তিতেই আমরা নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করেছি, যেটি আগামীকাল জনসমাবেশে ঘোষণা করা হবে।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা আমাদের ইশতেহারে তরুণদের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ এবং প্রশাসন নিয়ে গঠিত রূপরেখা উপস্থাপন করব। গত এক বছরে আমাদের কার্যক্রমের সফলতা ও ব্যর্থতার বিশ্লেষণ থাকবে সেখানে।”
জুলাই ঘোষণাপত্র কেমন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গত ৩১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রথম এই দাবিটি তোলা হয়। তখন একটি খসড়া সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছিল, পরে বিভিন্ন দল তাদের নিজ নিজ খসড়া জমা দেয়। এখন সরকার সেগুলোর সমন্বয় করে একটি চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। আমরা দাবি করেছি, এটি যেন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার বিষয় না হয়, বরং সংবিধানে স্বীকৃতি পায়।”
তিনি আরও বলেন, “সব রাজনৈতিক দল যেন এ বিষয়টিকে সমর্থন করে এবং প্রতিশ্রুতি দেয়—এটাই আমরা চাই। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন কোনো দলীয় গণ্ডিতে আটকে থাকতে পারে না। এটি হতে হবে জনগণের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।”