বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক শুক্রবার এক জোরালো বার্তা দেন— জুলাই আন্দোলনের চেতনায় ফিরে এসে সকল অংশীজনকে এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে হবে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে জুমার নামাজের পর অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে মামুনুল হক বলেন,
“শহীদদের রক্ত এখনো শুকায়নি। অথচ সেই রক্তের ওপর হেঁটে চলছে ফ্যাসিস্ট শক্তির চক্রান্ত। আমাদের মান-অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
এই সমাবেশে মূলত চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:
-
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল,
-
২০১৩ সালের শাপলা চত্বর ও জুলাই গণআন্দোলনের হত্যাকাণ্ডের বিচার,
-
হেফাজত নেতাকর্মীদের ওপর দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার,
-
ফিলিস্তিন ও ভারতের মুসলিম গণহত্যা বন্ধে রাষ্ট্রীয় অবস্থান স্পষ্টকরণ।
বক্তব্যে মামুনুল হক আরও জানান,
“আমরা চাই, খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার দৃশ্যমান হোক। সংবিধান ও রাজনৈতিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যৌক্তিক সময়েই নির্বাচন হোক। তার আগে নির্বাচনী ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন।”
"জামায়াত, বিএনপি, ছাত্র-জনতা ও হেফাজতকে একসাথে কাজ করতে হবে"
সমাবেশে মামুনুল হক রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলেন,
“ষড়যন্ত্র থামাতে মতভেদ ভুলে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্র-জনতা এবং হেফাজতসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটি কোনো একক দলের লড়াই নয়—এই যুদ্ধ বাংলাদেশের আত্মার অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ।”
তিনি সতর্ক করে বলেন,
“মব কালচারে দাবিদাওয়া আদায়ের সংস্কৃতি চলতে থাকলে কখনোই একটি টেকসই রাষ্ট্র গড়া যাবে না। আমাদের দায়িত্বশীল ও পরিণত আচরণ প্রয়োজন।”
নারীর মর্যাদা নিয়ে শক্ত বার্তা: "ঘরে ঘরে গিয়ে অধিকার আদায় করব"
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে ‘বহুত্ববাদী মতবাদের কুপ্রস্তাব’ বলে উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন,
“ইসলাম নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। সরকার যদি এই মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তবে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“এই কমিশনে এমন অনেক প্রস্তাব রয়েছে যা ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই আমরা সরকারকে সতর্ক করে বলছি, এর কুফল ভয়াবহ হতে পারে।”
শীর্ষ নেতাদের কণ্ঠে একই সুর: গণআন্দোলনের চেতনায় ফেরার সময় এখনই
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন:
-
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান (প্রধান অতিথি),
-
নায়েবে আমীর মাওলানা আবু তাহের নদভী,
-
মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, আহমেদ আলী কাসেমী, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মুফতি কামাল উদ্দিন, মাওলানা শোয়াইব, ইয়াকুব ওসমানী, আফসার মাহমুদ,
-
এবং বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে হাজারো নেতাকর্মী যোগ দেন।
উপসংহার:
এই সমাবেশ কেবল রাজনৈতিক বার্তা নয়, ছিল চেতনার পুনর্জাগরণ। মামুনুল হক ও হেফাজতের বক্তব্যে স্পষ্ট—এখন আর সময় নেই আলাদা আলাদা অবস্থান নেওয়ার। জাতীয় স্বার্থ, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং শহীদের রক্তের দাবি—সব কিছুই বলছে, এবার সময় ঐক্যের।