ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার আগুনে জ্বালানি যোগ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পাল্টা হামলার প্রেক্ষিতে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া কড়া বার্তায় মোদি বলেন, ‘ওদিক থেকে গুলি এলে, এদিক থেকে গোলা যাবে।’
শনিবার দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের পক্ষ থেকে আসে এই কঠোর প্রতিক্রিয়া। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে বিশ্লেষকরা দেখছেন 'যুদ্ধবিরতির ভেতরে লুকিয়ে থাকা লৌহ কঠোর অবস্থান' হিসেবে।
‘অপারেশন সিন্দুর’: পাকিস্তানে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে ভারতীয় অভিযান
পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারত যে সামরিক অভিযান চালিয়েছে, তা ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামেই পরিচিত। বিমানবাহিনীর ব্যবহারে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে চালানো হয় এই আক্রমণ। ভারত দাবি করছে, এই অভিযানে সীমান্ত থেকে হওয়া ড্রোন ও গোলাবর্ষণের জবাব দেওয়া হয়েছে।
ভারতের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই অপারেশন এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতেও এমন প্রতিরোধমূলক হামলা চালানো হবে, যদি সীমান্তে উত্তেজনা অব্যাহত থাকে।
মোদির স্পষ্ট হুঁশিয়ারি: কূটনীতি নয়, এবার প্রতিক্রিয়ায় আগুন
মোদি সেনাবাহিনীকে যে বার্তা দিয়েছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারি সূত্র অনুসারে, তিনি বলেন, "ওহা সে গোলি চলেগি, ইহা সে গোলা চলেগা।" অর্থাৎ পাকিস্তান থেকে গুলি এলে, ভারতের পক্ষ থেকে উত্তর হবে আরও বড় মাপের হামলায়।
এই বক্তব্য ভারতের সেনানীতিতে একটি নতুন মোড় নির্দেশ করে, যা কেবল প্রতিরক্ষামূলক নয় বরং আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়ার প্রতীক।
কাশ্মির প্রশ্নে মধ্যস্থতা নয়, হস্তান্তর দাবি ভারতের
কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করা হয়েছে। সরকার বলেছে, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মির ভারতকে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। ভারতের দৃষ্টিতে, কাশ্মির পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ বিষয়, যার ওপর আন্তর্জাতিক কোনো মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই।
রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিতে স্বাগত জানিয়ে কাশ্মির ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তিনি বলেন, "আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করব, যদি হাজার বছরের পর কোনো সমাধান পাওয়া যায়।" কিন্তু ভারত তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
রাজনৈতিক নয়, কেবল সামরিক স্তরে যোগাযোগ চলবে
ভারতের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হবে না। কেবল সেনাবাহিনীর DGMO স্তরে যোগাযোগ বজায় থাকবে। সরকারি সূত্রের ভাষায়, "এই মুহূর্তে আলোচনার আর কোনো বিষয় নেই।"
উত্তপ্ত পরিস্থিতির নতুন অধ্যায়
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক যে আবার উত্তেজনার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, তা মোদির বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলার পাশাপাশি কাশ্মির প্রশ্নে অনড় অবস্থান গোটা অঞ্চলে নিরাপত্তা জটিলতা বাড়িয়ে তুলছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর হলেও, বাস্তবে শান্তির বার্তা এখনো বহু দূরে।